ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে জঙ্গি হামলা চালিয়ে গত সপ্তাহে ২৮ পর্যটক হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের উত্তেজনা অব্যাহত রয়েছে। বৃহস্পতিবার দিনগত রাতের পর শুক্রবার রাতেও দুই দেশের সেনারা পাল্টাপাল্টি গুলি চালিয়েছেন। এদিকে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান তাদের যুদ্ধ-প্রস্তুতির বিবরণ দিয়ে জানিয়েছেন, ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পাকবাহিনী পুরো প্রস্তুত রয়েছে। পাশাপাশি পাকিস্তান সরকারের পক্ষ থেকে পেহেলগামে জঙ্গি হামলার বিষয়ে আন্তর্জাতিক তদন্তও দাবি করা হয়েছে। অন্যদিকে ভারতও যুদ্ধের নানা প্রস্তুতি গ্রহণের পাশাপাশি গতকাল গণমাধ্যমের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করে ‘ভারতীয় সামরিক তৎপরতার’ কোনো খবর বা ভিডিওচিত্র প্রকাশ না করার নির্দেশনা দিয়েছে। পাশাপাশি দেশটিতে বৈধ বা অবৈধভাবে অবস্থানকারী পাকিস্তানিদের শনাক্ত করে তাদের স্বদেশে ফেরত পাঠাতে বলা হয়েছে। এমন উত্তেজনাকর পরিস্থিতির মধ্যে পরাশক্তি হিসেবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পক্ষে-বিপক্ষে কিছু না উল্লেখ করে দুই দেশকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, তারা নিজেরাই নিজেদের সামলে নেবে। এ ছাড়া উত্তেজনা নিরসনের পক্ষে এদিন ইরান ও সৌদি আরব মধ্যস্থতা করার প্রস্তাবও দিয়েছে। সূত্র : রয়টার্স, বিবিসি, এনডিটিভি, ডন, আলজাজিরা।


প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, জম্মু-কাশ্মীরের পেহেলগামে জঙ্গি হামলার জেরে উত্তেজনার মধ্যে নিয়ন্ত্রণরেখায় ভারত ও পাকিস্তানের সেনাদের মধ্যে ফের গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার দিনগত রাতে কাশ্মীর ও লাদাখ সীমান্তে এ গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এর আগের রাতেও দুই পক্ষের মধ্যে একই ধরনের ঘটনা ঘটে। ভারতের সেনা কর্মকর্তারা বলেছেন, সীমান্তের ওপারের একাধিক পাকিস্তানি সেনাচৌকি থেকে গুলি ছোড়া হয়। তার উপযুক্ত জবাব দিয়েছেন ভারতীয় সেনারা। ভারতের সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘২৫-২৬ এপ্রিল রাতে কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখাজুড়ে একাধিক পাকিস্তান সেনাচৌকি থেকে বিনা উসকানিতে ছোট আকারে গুলি চালানো হয়। ভারতীয় সেনারা ছোট অস্ত্র ব্যবহার করে উপযুক্ত জবাব দিয়েছেন। এতে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।’এদিকে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান অসীম মুনির গতকাল মিলিটারি একাডেমির (পিএমএ) পাসিং আউট প্যারেডে দেওয়া ভাষণে যুদ্ধ-প্রস্তুতির বিবরণ দিয়ে বলেন, ‘আত্মরক্ষার জন্য পাকিস্তানের প্রস্তুতি পুনর্ব্যক্ত করছি। দ্বিজাতি তত্ত্ব মুসলিম এবং হিন্দুদের মধ্যে পার্থক্যকে নির্দেশ করে, যা পাকিস্তানের পরিচয় এবং অস্তিত্বের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়ে গেছে। পাকিস্তানের পূর্বপুরুষরা একটি পৃথক মুসলিম পরিচয়ের বিশ্বাসের দ্বারা দেশ গঠনের জন্য অপরিসীম ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তাই পাকিস্তানের জনগণ তাদের মাতৃভূমি রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ। দেশকে রক্ষা করার প্রতিশ্রুতিতে অটল সেনারা। পাকিস্তান যে কোনো বহিরাগত হুমকির মুখোমুখি হতে সক্ষম। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে সর্বাত্মকভাবে প্রস্তুত রয়েছে।’


পরমাণু অস্ত্র নিয়ে গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার সূচকের তথ্য : ভারত ও পাকিস্তানের সামরিক সক্ষমতার গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো নিয়ে বিশ্লেষণমূলক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মালয়েশিয়াভিত্তিক ‘ডিফেন্স সিকিউরিটি এশিয়া’। ‘গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার সূচক (জিএফপি) ২০২৫’ অনুসারে করা এ প্রতিবেদন ডিফেন্স সিকিউরিটি এশিয়ার ওয়েবসাইটে গত শুক্রবার প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা এখন ১৪০ থেকে ১৫০টি। এদিক থেকে পাকিস্তানের সক্ষমতা ভারতের চেয়ে বেশি। ডেলিভারি সিস্টেমের মধ্যে আছে শাহিন-টু/থ্রি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, এফ-১৬ যুদ্ধবিমান, বাবর ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র। তবে ভারতের প্রতিরক্ষা বাজেট পাকিস্তানের ৬ থেকে ৮ গুণ। ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে স্থলবাহিনী। ভারতের ট্যাংক ৪ হাজার ৬১৪টি। সাঁজোয়া যান ১ লাখ ৫১ হাজার ২৪৮টি। কামান ৯ হাজার ৭১৯টি। বিশেষ বাহিনীর মধ্যে আছে প্যারা এসএফ, ঘাতক ফোর্স, এমএআরসিওএস। পাকিস্তানের ট্যাংক ৩ হাজার ৭৪২টি। সাঁজোয়া যান ৫০ হাজার (আনুমানিক)। কামান ৪ হাজার ৪৭২টি (৩৭৫ স্বয়ংক্রিয় হাউইটজারসহ)। বিশেষ বাহিনীর মধ্যে আছে স্পেশাল সার্ভিস গ্রুপ (এসএসজি), এসএসজি নৌ ও স্পেশাল সার্ভিস উইং। এগুলো আকারে তুলনামূলক ছোট হলেও সমীহ করার মতো। ট্যাংক, সশস্ত্র যান ও কামানে সংখ্যাগত দিক থেকে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে ভারত।