জ্যোতিষী, জরিপ, জল্পনাকল্পনা ও সব পূর্বাভাস তছনছ করে রেকর্ড গড়ে ফের হোয়াইট হাউসে ফিরতে যাচ্ছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (৭৮)। মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে শুধু ইলেকটোরাল নয়, পপুলার ভোটেও বড় ব্যবধানে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিসকে হারিয়েছেন তিনি। সিএনএন, বিবিসি, আলজাজিরাসহ বিশ্বের সব প্রভাবশালী গণমাধ্যমগুলোর সর্বশেষ প্রকাশিত তথ্যানুসারে, ৫৩৮ ইলেকটোরাল ভোটের মধ্যে ২৭৬টি পেয়ে এগিয়ে আছেন ট্রাম্প। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের ঝুড়িতে গেছে ২২৩টি ইলেকটোরাল ভোট। পপুলার ভোটের সর্বশেষ প্রাপ্ত হিসাবে, রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্প পেয়েছেন ৭ কোটি ১৩ লাখের বেশি ভোট। আর কমলা পেয়েছেন ৬ কোটি ৬২ লাখের অধিক ভোট। এ হিসাবে ৫০ লাখের বেশি ভোট পেয়েছেন ট্রাম্প। লক্ষণীয় হলো, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণী সাতটি সুইং স্টেটের সব কটিতেই জয় পেতে যাচ্ছেন ট্রাম্প। সর্বশেষ তথ্যানুসারে, সুইং স্টেটের মধ্যে পেনসিলভানিয়ায় ৫০ শতাংশের বেশি ভোট, জর্জিয়ায় ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে এগিয়ে আছেন সাবেক এ প্রেসিডেন্ট। অপরদিকে আমেরিকার ২৪৮ বছরের ইতিহাসে এক মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার পর বিরতি দিয়ে ফের ক্ষমতায় ফেরা দ্বিতীয় ব্যক্তি হচ্ছেন ট্রাম্প। সেই সঙ্গে যৌননিপীড়ন, সম্পদের হিসাব গোপন রাখাসহ কয়েকটি অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত (কনভিকটেড ফেলন) একমাত্র মার্কিনি হিসেবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় প্রথম ব্যক্তিও তিনি।
সমৃদ্ধ আমেরিকা না গড়া পর্যন্ত বিশ্রাম নেব না : সমৃদ্ধ আমেরিকা না গড়া পর্যন্ত বিশ্রাম নেবেন না বলে উল্লেখ করেছেন বিজয়ী ট্রাম্প। নিজের বিজয় নিশ্চিত হওয়ার পরপরই গতকাল (স্থানীয় সময় মঙ্গলবার গভীর রাত) ফ্লোরিডার ওয়েস্ট পাম বিচে রিপাবলিকান পার্টির প্রধান কার্যালয়ে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে এ কথা বলেন তিনি। ভাষণে নির্বাচনি জয়কে ‘রাজনৈতিক বিজয়’ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। বিজয় ভাষণে ট্রাম্প বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭ এবং ৪৫তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার অসাধারণ সম্মান প্রদর্শনের জন্য আমি আমেরিকান জনগণকে ধন্যবাদ জানাতে চাই।’ সেই সঙ্গে ভাষণে স্ত্রী সাবেক ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের ব্যাপক প্রশংসা করেন ট্রাম্প।
ট্রাম্পের বিজয়ে নিউইয়র্কে বিজয় র্যালির ঘোষণা দিয়েছেন প্রবাসীরা : বাংলাদেশি আমেরিকানদের বড় একটি অংশ ডেমোক্র্যাট হলেও এবার ভোটের ময়দানে তার ব্যত্যয় দেখা গেছে। মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি, অর্থনৈতিক দুরবস্থা, অভিবাসন সমস্যা ইত্যাদি কারণে অনেকেই ভোট দিয়েছেন ট্রাম্পকে। এমনকি অনেকে প্রকাশ্যে ট্রাম্পের পক্ষে র্যালিও করেছেন। ট্রাম্পের প্রতি প্রবাসে হিন্দু-বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সমর্থনের পাল্লা ভারী হয় বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতনের নিন্দা ট্রাম্পের মুখে ধ্বনিত হওয়ায়। ফিলিস্তিনিদেও নির্বিচার হত্যাযজ্ঞে ইসরায়েলকে বাইডেন-কমলার সহযোগিতার কারণে মুসলিম ভোটারদের সঙ্গে অনেক প্রবাসীও ক্ষুব্ধ ছিলেন কমলার প্রতি। তাঁরাও ভোট দেননি কমলাকে। এমনকি ডোনাল্ড ট্রাম্পকেও দেননি। এই শ্রেণির ভোটারের প্রতিনিধিত্বকারী বাংলাদেশি আমেরিকান অ্যাডভোকেসি গ্রুপের প্রেসিডেন্ট জয়নাল আবেদীন গত সপ্তাহে এক সমাবেশে সবার প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েই ক্ষান্ত হননি, ভোটের দিন তিনি দলবদ্ধভাবে কেন্দ্রে হাজির হয়ে গ্রিন পার্টির প্রার্থী জিল স্টাইনকে ভোট দেন। অথচ তাঁরা সবাই হচ্ছেন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নিবন্ধিত ভোটার। একইভাবে পেনসিলভানিয়া, মিশিগানের মতো সুইং স্টেটগুলোয় ট্রাম্পের পক্ষে ভোটের পাল্লা ভারী হয়। ট্রাম্পের এই বিস্ময়কর বিজয়ে নিউইয়র্কে বিজয় র্যালির ঘোষণা দিয়েছেন প্রবাসীরা।
পপুলার ভোটেও জয়ী ট্রাম্প : নির্বাচনে ইলেকটোরাল ভোটের পাশাপাশি পপুলার বা জনসাধারণের ভোটেও কমলা হ্যারিসের চেয়ে অনেক এগিয়ে ট্রাম্প। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যানুসারে, প্রতিদ্বন্দ্বী কমলার সঙ্গে তাঁর ভোটের ব্যবধান ৫০ লাখেরও বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রের ভোটের চূড়ান্ত ফলাফল নির্ধারিত হয় ইলেকটোরাল কলেজ নামের একটি বিশেষ নির্বাচকম লীর ভোটের মাধ্যমে। আবার ইলেকটোরাল কলেজের ভোট নির্ভর করে সাধারণ ভোটারদের ভোটের ফলাফলের ওপর। এই ভোটকেই বলা হয় পপুলার ভোট।
ইলেকটোরাল কলেজের ভোটের সংখ্যা মোট ৫৩৮টি। কোনো প্রার্থীকে বিজয়ী হতে হলে অন্তত ২৭০টি ভোট পেতে হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্যের মধ্যে সবগুলোর আনুষ্ঠানিক ফলাফল এখনো ঘোষণা করা হয়নি। বিবিসি, সিএনএন এবং অন্যান্য প্রথম সারির সংবাদমাধ্যমগুলোর তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ খবর পর্যন্ত ৫৩৮টি ইলেকটোরাল ভোটের মধ্যে ২৭৬টি পেয়েছেন ট্রাম্প। অন্যদিকে কমলা পেয়েছেন ২২৩টি ভোট।
সংবাদমাধ্যমগুলোর সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুসারে, পপুলার ভোটেও কমলার চেয়ে স্পষ্ট এগিয়ে ট্রাম্প। তিনি পেয়েছেন ৭ কোটি ১৪ লাখ ১৯ হাজারের বেশি ভোট। আর কমলা পেয়েছেন ৬ কোটি ৬৩ লাখ ৪৩ হাজারের অধিক ভোট। অর্থাৎ কমলার চেয়ে ৫০ লাখের ভোট বেশি পেয়েছেন ট্রাম্প।
লক্ষণীয় হলো, পপুলার ভোটে ট্রাম্পের ক্ষেত্রে এবারই প্রথম এমন ঘটল। ২০১৬ সালের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনকে পরাজিত করেছিলেন তিনি। তখন ইলেকটোরাল কেেলজের ভোটে এগিয়ে থাকলেও পপুলার ভোটে বেশ পিছিয়ে ছিলেন ট্রাম্প। হিলারির সঙ্গে তাঁর প্রাপ্ত ভোটের ব্যবধান ছিল ৩০ লাখেরও বেশি। আর এবার কমলার চেয়ে ৫০ লাখের বেশি ভোট পেলেন তিনি।
ট্রাম্পকে অভিনন্দন বিশ্বনেতাদের : প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণা না হলেও এরই মধ্যে বিশ্বনেতাদের অভিনন্দনে ভাসছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর দেশের ক্ষমতায় ফেরায় ট্রাম্পকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিসহ আরও অনেক।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার তাঁর এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে লিখেন, ‘নির্বাচনে ঐতিহাসিক জয়ের জন্য নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে অভিনন্দন। আগামী দিনে আমি আপনাদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী।’ ভারতের প্রধানমন্ত্রী এক্স বার্তায় ট্রাম্পকে বন্ধু সম্বোধন করে লিখেন, ‘আন্তরিক অভিনন্দন বন্ধু, আসুন এবার আমরা একসঙ্গে আমাদের জনগণের উন্নতির জন্য এবং বিশ্বশান্তি, স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করি।’
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এক্স হ্যান্ডলে লিখেন, ‘ইতিহাসের সেরা প্রত্যাবর্তনের জন্য অভিনন্দন! হোয়াইট হাউসে আপনার ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তন আমেরিকার জন্য এক নতুন সূচনা।’
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ শুভেচ্ছা বার্তায় লিখেন, ‘অভিনন্দন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বিশ্বে আরও শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য একসঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত।’
নির্বাচনে জয়ী হওয়ায় ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানানো অন্যান্য নেতার মধ্যে আছেন নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী জোনাস গাহর স্টোয়ার, সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী উলফ ক্রিস্টারসন, অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলর কার্ল নেহামার, হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওরবান, চেক প্রধানমন্ত্রী পেত্র ফিয়ালা, রোমানিয়ার প্রধানমন্ত্রী মার্সেল সিওলাক, সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী উলফ ক্রিস্টারসন, ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিকসেন, এল সালভাদরের প্রেসিডেন্ট নায়িব বুকেলে। সব নেতাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়ে একসঙ্গে কাজ করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ওয়াশিংটনের সঙ্গে সম্পর্ক ‘রিসেট’ করতে চায় মস্কো : মস্কো এবং ওয়াশিংটনের মধ্যে সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন রাশিয়ার সার্বভৌম সম্পদ তহবিলের প্রভাবশালী প্রধান কিরিল দিমিত্রিয়েভ। বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলীয় প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয় ঘোষণার পর এই মন্তব্য করেন তিনি।
সোভিয়েত আমলে ১৯৬২ সালের কিউবান ক্ষেপণাস্ত্র সংকটের পর মস্কো এবং পশ্চিমা বিশ্বের মাঝে সবচেয়ে বড় সংঘাতের সূত্রপাত করেছে ২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার শুরু করা যুদ্ধ। ইউরোপের এই সংকট রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমা বিশ্বকে পারমাণবিক যুদ্ধের প্রায় দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে।
মার্কিন এবং রুশ কূটনীতিকরা বলছেন, বিশ্বের বৃহত্তম দুই পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রের সম্পর্ক বর্তমানে স্নায়ুযুদ্ধের সময়কালীন খারাপ পরিস্থিতিতে পৌঁছেছে।
ট্রাম্পের জয়ের পরপরই নিজের মতামত জানাতে গিয়ে রাশিয়ার সার্বভৌম তহবিলের প্রধান কিরিল দিমিত্রিয়েভ বলেন, প্রচারণার সময় তাদের বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে ভুয়া তথ্য ছড়ানোর পরও প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ও সিনেটে ট্রাম্পের দল জিতেছে।
গোল্ডম্যান স্যাচের সাবেক এই ব্যাংকারের সঙ্গে ট্রাম্পের নির্বাচনি প্রচার শিবিরের সম্পর্ক ছিল। তিনি বলেন, রিপাবলিকান শিবিরের অর্জিত বিজয়ের মাধ্যমে এটা পরিষ্কার হয়েছে যে আমেরিকানরা নজিরবিহীন মিথ্যাচার, অদক্ষতা ও বাইডেন প্রশাসনের বিদ্বেষে ক্লান্ত।
দিমিত্রিয়েভ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির বিজয়ে রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের নতুন সুযোগ তৈরি হয়েছে।
উল্লেখ্য, এর আগে ২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন মস্কোর সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। পুনঃস্থাপনের প্রস্তাব সত্ত্বেও সেই সময় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সম্পর্কে আরও অবনতি ঘটে।
বাইডেনের ভুল থেকে ট্রাম্পকে শিক্ষা নিতে বলল হামাস : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয়ের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে হামাস। এমনকি বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিতেও তাঁর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী এই গোষ্ঠীটি। হামাসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সামি আবু জুহরি বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে গাজা যুদ্ধ বন্ধ করতে পারবেন বলে ট্রাম্প অতীতে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা এখন পরীক্ষা করা হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা ট্রাম্পকে (প্রেসিডেন্ট জো) বাইডেনের ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’
উল্লেখ্য দীর্ঘদিনের নিয়ম অনুসারে নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট পরবর্তী বছরের ২০ জানুয়ারি শপথ নেন। সে রীতি মেনে ডোনাল্ড ট্রাম্পও আগামী বছরের ২০ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণের মাধ্যমে ফের হোয়াইট হাউসে ফিরবেন। এদিন মার্কিন প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু ক্যাপিটলের পাদদেশে ট্রাম্প ও সদ্য নির্বাচিত ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভান্স গণমাধ্যম ও বিশ্বনেতাদের উপস্থিতিতে শপথ নেবেন। এর মধ্য দিয়ে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে শাসনে ঢুকবে আমেরিকাসহ পুরো বিশ্ব। তত দিন পর্যন্ত বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তাঁর দায়িত্ব পালন করবেন।
রিপাবলিকান পার্টির নতুন তারকা ইলন মাস্ক, বললেন ট্রাম্প : প্রযুক্তি উদ্যোক্তা ইলন মাস্ককে রিপাবলিকান পার্টির ‘নতুন তারকা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য ৪৭তম প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ফ্লোরিডার ওয়েস্ট পাম বিচে বিজয়ী বক্তৃতায় এই মন্তব্য করেন তিনি। এ সময় মাস্ককে নিয়ে স্মৃতিচারণও করেন ট্রাম্প। তিনি জানান, একবার স্পেসএক্স রকেটের একটি ভিডিও দেখার সময় তিনি মাস্ককে ৪০ মিনিটের জন্য আটকে রেখেছিলেন। এ ছাড়াও মাস্ককে বিস্ময়কর ব্যক্তি হিসেবেও উল্লেখ করেন ট্রাম্প।
ভাষণে ট্রাম্প বলেন, ‘দেশের রোগমুক্তিতে সাহায্য করতে যাচ্ছি। এটি হবে আমেরিকার স্বর্ণযুগ।’ ‘এটি আমেরিকান জনগণের জন্য একটি দুর্দান্ত বিজয়, যা আমাদের আমেরিকাকে আবারও মহান রাষ্ট্রে পরিণত করার সুযোগ দেবে’, যোগ করেন তিনি।
ট্রাম্পের সঙ্গে কাজ করতে চায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন : সদ্য বিজয়ী ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) শীর্ষ কর্মকর্তা। ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লিয়েন বলেন, ‘ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্র কেবল মিত্র নয়, আমাদের মধ্যে প্রকৃত অংশীদারত্ব রয়েছে। যা ৮০ কোটি নাগরিককে ঐক্যবদ্ধ করেছে।’
এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘আসুন, আমরা একটি ট্রান্সআটলান্টিক অংশীদারত্বে কাজ করি। যা আমাদের নাগরিকদের জন্য সুফল বয়ে আনতে অব্যাহত থাকবে। আটলান্টিকের দুই পারেই লক্ষাধিক কর্মসংস্থান এবং বিপুল বাণিজ্য ও বিনিয়োগ আমাদের অর্থনৈতিক সম্পর্কের স্থিতিশীলতা এবং গতিশীলতার ওপর নির্ভর করে।’
ট্রাম্পের আগের মেয়াদে ইইউ থেকে আমদানি করা স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামে শুল্ক আরোপ ইউরোপের অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল।
ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানাবেন না পুতিন : প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন বিশ্বনেতারা। তবে রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের এমন কোনো পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়েছে ক্রেমলিন। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ গতকাল বলেন, রাশিয়া সতর্কতার সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তথ্য পর্যবেক্ষণ করছে। ‘সুনির্দিষ্ট বক্তব্য ও উদ্যোগ’ না দেখা পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক মূল্যায়ন করার কোনো সম্ভাবনা নেই। এ বিষয়ে দিমিত্রি পেসকভ আরও বলেন, ‘ভুলে গেলে চলবে না যে আমরা একটি ‘অবন্ধুসুলভ’ দেশের কথা বলছি, যেই দেশ আমাদের দেশের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুদ্ধে জড়িয়ে রয়েছে।’