যুক্তরাষ্ট্রে নাগরিকত্ব সাক্ষাৎকারের সময় গ্রেফতার হলেন কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির ছাত্রনেতা মোহসিন মাধবি। সোমবার (৮ এপ্রিল) ভোরে ভারমন্টে ইমিগ্রেশন অফিসে সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে তাকে আটক করে যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন পুলিশ। অভিযোগ—গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে সংগঠিত সমাবেশে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি।


২০১৪ সালে রিফ্যুজি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা মোহসিন বর্তমানে গ্রীনকার্ডধারী। গত ১০ বছর ধরে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করে নিয়মিত প্রক্রিয়ায় ইন্টারভিউ দিতে যান ভারমন্ট স্টেটের একটি ইমিগ্রেশন অফিসে। সেখান থেকেই তাকে গ্রেফতার করা হয়।


ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মোহসিন মাধবি এখন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছেন। তার গ্রীনকার্ড ইতোমধ্যেই বাতিল করা হয়েছে। তবে ভারমন্টের ফেডারেল বিচারপতি উইলিয়াম কে. সেশন্স থার্ড তাৎক্ষণিক এক আদেশে তাকে রাজ্যের বাইরে না নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। আদালতের পরবর্তী নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত মোহসিনকে বহিষ্কার করা যাবে না।


মোহসিনের আইনজীবী রূনা দ্রুবি জানান, তার মক্কেল কোনো সহিংস কর্মসূচিতে অংশ নেননি। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে সংরক্ষিত মতপ্রকাশের অধিকার অনুযায়ী শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদে অংশ নিয়েছেন।


কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির বৌদ্ধ ছাত্র সংগঠনের প্রেসিডেন্ট মোহসিনের জন্ম ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে। সেখানে বেড়ে ওঠা এই শিক্ষার্থী দর্শন বিভাগে গ্র্যাজুয়েশনের শেষ বর্ষে রয়েছেন। আসন্ন জুন মাসে স্নাতক সম্পন্ন করে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে মাস্টার্স করার পরিকল্পনা ছিল তার।


মোহসিনের গ্রেফতারের ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন ভারমন্টের দুই প্রভাবশালী ইউএস সিনেটর—ডেমোক্র্যাট পিটার ওয়েলস এবং স্বতন্ত্র বার্নি স্যান্ডার্স। তারা মোহসিনের দ্রুত মুক্তি দাবি করে বলেছেন, 'শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ ও মতপ্রকাশের অধিকার হরণ যুক্তরাষ্ট্রের সাংবিধানিক মূল্যবোধের পরিপন্থী।'


কলম্বিয়ার শিক্ষার্থীরাও এই ঘটনার তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। তারা বলছে, 'শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে অংশ নেয়ায় শিক্ষার্থীদের ওপর এই ধরনের ব্যবস্থা নেয়া যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানকেই অপমান করা।'


এদিকে জানা গেছে, গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে নেতৃত্বদানকারী যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত সহস্রাধিক শিক্ষার্থীর ভিসা ইতোমধ্যে বাতিল করা হয়েছে। তাদের অনেককে স্বেচ্ছায় নিজ দেশে ফিরে যেতে নির্দেশ দিয়েছে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ।  


এই ঘটনার পর নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে অভিবাসী শিক্ষার্থীদের মধ্যে, বিশেষ করে যারা যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে মানবাধিকার বা রাজনৈতিক ইস্যুতে সোচ্চার ভূমিকা রাখছেন।