আল্লাহ তাআলার প্রিয় বান্দাদের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, যখন কোনো অপরিণামদর্শী মূর্খ ব্যক্তি তাদের অহেতুক কাজকর্ম বা বিবাদের দিকে আহ্বান করে, তারা এতে সাড়া দেয় না। বরং উত্তম পন্থায় এগুলো এড়িয়ে চলে। নিজের আঁচলকে মূর্খতাসুলভ বিষয় থেকে বাঁচিয়ে রাখে। আল্লাহ বলেন, ‘তাদের যখন মূর্খ ব্যক্তিরা সম্বোধন করে, তখন তারা বলে সালাম।’(সুরা : ফুরকান, আয়াত : ৬৩)


এখানে ‘সালাম’ বলে প্রচলিত সালাম উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়নি, বরং নিরাপত্তার কথাবার্তা বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ মূর্খদের জবাবে তারা নিরাপত্তার কথা বলে, যেন অন্যরা কষ্ট না পায় এবং নিজেরা গুনাহগার না হয়।


প্রকৃতপক্ষে সব কিছুর সম্পর্ক জবানের সঙ্গে। জবানকে হেফাজত করতে পারলে নিজেকে সব ধরনের পাপ-পঙ্কিলতা, বিপদ-আপদ ও বালা-মুসিবত থেকে বাঁচিয়ে রাখা যায়। এ জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নাজাত পায় সে, চুপ থাকে যে।’ (জামে তিরমিজি, হাদিস : ২৫০১)


আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মানুষের প্রতিটি কথা তার জন্য অপকারী, উপকারী নয়। কেবল সৎ কাজের আদেশ, অসৎ কাজ থেকে নিষেধ এবং আল্লাহর জিকির তার জন্য লাভজনক।’(জামে তিরমিজি, হাদিস : ২৪১২)


আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কোনো ব্যক্তির ইসলামের সৌন্দর্য হলো অনর্থক আচরণ পরিত্যাগ করা।’(জামে তিরমিজি, হাদিস : ২৩১৭)


জিহ্বা সংযত রাখার ব্যাপারে সাহাবায়ে কিরাম থেকে অনেক বক্তব্য বর্ণিত হয়েছে। কয়েকটি উল্লেখ করা হলো—আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি যতক্ষণ না স্বীয় জিহ্বা সংযত রাখতে পারবে, খোদাভীতির হক আদায় করতে পারবে না।’


আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, ‘সব সময় উত্তম কথা বলো, তাহলে উপকৃত হবে। অহেতুক কথাবার্তা বর্জন করো, তাহলে লজ্জা ও বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা পাবে।’


আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘কোনো ব্যক্তির জন্য পাঁচটি স্বভাব সোনা-রুপার চেয়ে বেশি মূল্যবান—১. অপ্রয়োজনীয় কথা না বলা; ২. প্রয়োজনীয় বিষয়ে অহেতুক কথা না বলা; ৩. কোনো মূর্খের সঙ্গে বিতর্কে লিপ্ত না হওয়া; ৪. অনুপস্থিত কারো ব্যাপারে এমন কথা না বলা, যা সে নিজের ব্যাপারে শুনতে চায় না; ৫. এমনভাবে কাজ করা, যেন এই বিশ্বাস থাকে যে ভালো কাজের প্রতিদান দেওয়া হবে এবং মন্দ কাজের জন্য শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে।’(মাউসুয়াতু রাসায়েল)


উপরোক্ত হাদিস ও সাহাবায়ে কিরামের বক্তব্য থেকে এটাই প্রমাণিত হয় যে সেই ব্যক্তিই জগতের বিপদ-আপদ ও বালা-মুসিবত থেকে রক্ষা পায়, যে তার জিহ্বা সংযত রাখতে পারে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে জবানের হেফাজত করার তওফিক দান করুন। আমিন।