ঈমান মুমিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। তাই মুমিন মাত্রই ঈমানের প্রতি যত্নশীল। তবে কখনো কখনো কিছু ভুলের কারণে ঈমান নষ্ট হয় মুমিনের। তার একটি হলো এমন বিষয়ের পেছনে পড়া, যা মানবীয় জ্ঞানবুদ্ধির ঊর্ধ্বে।
ইমাম তহাবি (রহ.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি এমন বিষয়ের জ্ঞান অর্জনের ইচ্ছা করবে, যা তার জ্ঞানের নাগালের বাইরে এবং যে বিষয়ে ব্যক্তির হৃদয় কখনো প্রশান্ত হবে না।’ উল্লিখিত বক্তব্যের ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনু আবিল ইজ্জ (রহ.) লেখেন, এই বাক্যে কোরআন ও হাদিসে যা শেখানো হয়েছে তার ওপর বাড়াবাড়ি এবং তার ব্যাপারে শিথিলতা দেখাতে নিষেধ করা হয়েছে। শেখানো বিষয়ে বাড়াবাড়ির অর্থ হলো, যে বিষয়ে মানুষকে জ্ঞান দেওয়া হয়নি এবং যে বিষয়ে মগ্ন হতে নিষেধ করা হয়েছে তাতে মগ্ন হয়ে যাওয়া। যেমন আল্লাহ বলেছেন, ‘যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নেই তুমি সে বিষয়ের পেছনে পোড়ো না।’
(সুরা : বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৩৬)
সুতরাং মুমিনের জন্য আবশ্যক হলো, অদৃশ্যের যেসব বিষয় নস দ্বারা প্রমাণিত তা মেনে নেওয়া। যখন মানুষ ওহির (তথা কোরআন ও সুন্নাহ) ওপর তৃপ্ত হতে পারে এবং নিষিদ্ধ বিষয়ে লিপ্ত হয়, তার এই কাজ নিষ্ঠাপূর্ণ একত্ববাদী বিশ্বাসের পথে অন্তরায়। (শরহু আকিদা আততহাবি, পৃষ্ঠা-৭২)
গবেষক আলেমরা বলেন, মুসলমান যখন আল্লাহর কালাম ও রাসুলের সুন্নাহ থেকে বিমুখ হয়ে গ্রিক দর্শন এবং মানবীয় বিভিন্ন মতাদর্শ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যায় তখনই তাকে পথভ্রষ্টতা পেয়ে বসে। এটাই যুগ যুগ ধরে মানুষের পথভ্রষ্টতার মূল কারণ। এই শ্রেণির মানুষ এমন কিছু বিষয় নিয়ে লিপ্ত হয়ে থাকে যার কোনো উপকার নেই।
বিভ্রান্তির কারণগুলো
যারা কোরআন-হাদিস পেছনে ফেলে মানবীয় বুদ্ধি-বিবেচনার আলোকে ধর্মীয় বিষয়গুলোর বিচার-বিশ্লেষণ করে তারা যেসব কারণে পথভ্রষ্ট হয় তার কয়েকটি তুলে ধরা হলো :
১. বুদ্ধি ও যুক্তির প্রাধান্য : যারা মানবীয় বুদ্ধির আলোকে অদৃশ্য ও পরকালীন বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করে, তারা মূলত কোরআন-হাদিসের ওপর বুদ্ধি ও যুক্তিকে প্রাধান্য দেয়। আর এই কারণে শয়তান ধ্বংস হয়েছিল। ইরশাদ হয়েছে, ‘সে বলল, আমি আদমের চেয়ে ভালো। তুমি তাকে সৃষ্টি করেছ মাটি থেকে।আর আমাকে সৃষ্টি করেছ আগুন থেকে।’
(সুরা : আরাফ, আয়াত : ১২)
২. আনুগত্যে শর্তারোপ : ইহকালীন ও পরকালীন মুক্তির জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের নিঃশর্ত আনুগত্য আবশ্যক। অথচ যুক্তিপ্রিয় মানুষগুলো নিঃশর্ত আনুগত্য করতে পারে না। পবিত্র কোরআনে এ বিষয়ে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অনুসরণ করল সে আল্লাহর অনুসরণ করল। আর যারা মুখ ফিরিয়ে নেবে, আমি তাদের জন্য আপনাকে সংরক্ষণকারী হিসেবে প্রেরণ করিনি।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৮০)
৩. ভালোবাসায় খাঁদ : পরকালীন মুক্তির জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি নিখাঁদ ভালোবাসা থাকা আবশ্যক। যার প্রতিফলন ঘটে নিঃশর্ত আনুগত্যে। কিন্তু যুক্তি ও তর্ক প্রিয় মানুষগুলো সেটা পারে না। তারা আল্লাহ ও রাসুল (সা.)-কে ভালোবাসতে পারে না। কারণ তাদের ইসলামের অনেক কিছুই যথাযথ মনে হয় না। মহান আল্লাহ বলেন, ‘বোলো, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাস, তাহলে আমার অনুসরণ করো। তাহলে আল্লাহও তোমাদের ভালোবাসবেন।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৩১)
৪. পার্থিব জীবনকে দ্বিন থেকে দূরে
রাখা : যুক্তি ও বুদ্ধির পূজারীদের আরেকটি মন্দ স্বভাব হলো, তারা পার্থিব জীবনকে দ্বিনি জবাবদিহির বাইরে মনে করে। তারা পার্থিব জীবনের সব কিছুকে শরিয়তের অধীন মনে করে না। আল্লাহ বলেন, ‘অতএব, তোমার পালকর্তার কসম, তারা ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে বিচারক বলে মেনে নেয়। অতঃপর তোমার মীমাংসার ব্যাপারে নিজের মনে কোনো রকম সংকীর্ণতা বোধ না থাকে এবং তা সন্তুষ্ট চিত্তে কবুল করে নেবে।’(সুরা : নিসা, আয়াত : ৬৫)
মহান আল্লাহ আমাদের সবার ঈমান ও ইসলামকে রক্ষা করুন। আমিন।