পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে যত্নযান হওয়া : যেসব আমলে মুমিনের ওপর জাহান্নামের আগুন হারাম হয়ে যায় তার একটি হলো নামাজ। যেমন—পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজের ব্যাপারে হাদিসে এসেছে, হানযালা আল-উসাইদি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি পূর্ণরূপে অজুকরত রুকু ও সিজদা যথাযথভাবে করে সময়মতো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ে যত্নবান হয় এবং নামাজকে আল্লাহর পক্ষ থেকে দেওয়া একান্ত ফরজ দায়িত্ব হিসেবে গ্রহণ করে, তার ওপর জাহান্নামের আগুনকে হারাম করে দেওয়া হয়। (মুসনদে আহমদ)


শুধু ফরজ নামাজই নয়, সুন্নতে মুয়াক্কাদা ও নফল নামাজের ব্যাপারে যত্নবান হলেও জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেওয়ার ঘোষণা আছে। উম্মে হাবিবা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি নিয়মিতভাবে জোহরের আগে চার রাকাত ও পরে চার রাকাত নামাজ আদায় করবে, তার জন্য জাহান্নাম হারাম করা হবে। (আবু দাউদ, হাদিস : ১২৬৯)

অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ...কিয়ামতের দিন জাহান্নামিদের থেকে যাদের প্রতি আল্লাহ তাআলা রহমত করতে ইচ্ছা করবেন, তাদের ব্যাপারে ফেরেশতাদের নির্দেশ দেবেন যে যারা আল্লাহর ইবাদত করত, তাদের যেন জাহান্নাম থেকে বের করে আনা হয়। ফেরেশতারা তাদের বের করে আনবেন এবং সিজদার চিহ্ন দেখে তাঁরা তাদের চিনতে পারবেন। কেননা আল্লাহ তাআলা জাহান্নামের জন্য সিজদার চিহ্নগুলো মিটিয়ে দেওয়া হারাম করে দিয়েছেন। ফলে তাদের জাহান্নাম থেকে বের করে আনা হবে।


কাজেই সিজদার চিহ্ন ছাড়া আগুন বনি আদমের সব কিছুই গ্রাস করে ফেলবে। অবশেষে তাদেরকে অঙ্গারে পরিণত অবস্থায় জাহান্নাম থেকে বের করা হবে। তাদের ওপর ‘আবে হায়াত’ ঢেলে দেওয়া হবে। ফলে তারা স্রোতে বাহিত ফেনার ওপর গজিয়ে ওঠা উদ্ভিদের মতো সঞ্জীবিত হয়ে উঠবে।


(বুখারি, হাদিস : ৮০৬)


আল্লাহর রাস্তায় বের হওয়া : আবায়া ইবনে রিফাআ (রহ.) বলেন, এক দিন জুমার নামাজে যাওয়ার পথে আমাকে আবু আবস (রা.) বলেছেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, যার দুই পা আল্লাহর রাস্তায় চলতে গিয়ে ধূলি ধূসরিত হয়, আল্লাহ তার জন্য জাহান্নামের আগুনে হারাম করে দেন।’ (বুখারি, হা: ৯০৭)


অন্য হাদিসে নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর রাস্তায় (লড়াইয়ের) ধূলি ও জাহান্নামের ধোঁয়া কোনো বান্দার মধ্যে কখনো একত্র হতে পারে না।’ (আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ২৮১)


নম্র ও সহজ-সরল ব্যবহার : মানুষের সঙ্গে আচরণে নম্র ও সহজ-সরল হওয়াও মুমিনের বৈশিষ্ট্য। যারা মানুষের সঙ্গে সদাচরণ করে, মহান আল্লাহ তাদেরও জাহান্নাম থেকে নাজাত দেবেন। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আমি কি তোমাদের জানিয়ে দেব না, কোন ব্যক্তির জন্য জাহান্নাম হারাম এবং জাহান্নামের জন্য কোন ব্যক্তি হারাম? যে ব্যক্তি মানুষের কাছাকাছি (জনপ্রিয়), সহজ-সরল, নম্রভাষী ও সদাচারী।



(তিরমিজি, হাদিস : ২৪৮৮)

আল্লাহভীতিতে অশ্রু বিসর্জন : আল্লাহর ভয়ে বিসর্জন করা অশ্রু মানুষের জন্য জাহান্নাম হারাম করে দেয়। ইরশাদ হয়েছে, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে মুমিন বান্দার চোখ থেকে আল্লাহর ভয়ে পানি বের হয়, যদিও তা মাছির মাথার পরিমাণ হয় এবং তা কপাল বেয়ে পড়ে, তাতে আল্লাহ তার জন্য জাহান্নাম হারাম করে দেন। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪১৯৭)


আল্লাহর রাস্তায় জেগে থাকা : আবু রায়হানা (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি : যে চোখ আল্লাহর রাস্তায় (মুসলিম ভূখণ্ড পাহারায়) বিনিদ্র থাকে, তার জন্য জাহান্নামের আগুন হারাম করা হয়েছে। (নাসায়ি, হাদিস : ৩১১৭)


দৃঢ়বিশ্বাস নিয়ে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র


ঘোষণা : রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তাআলা সে ব্যক্তিকে জাহান্নামের জন্য হারাম করে দিয়েছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ উচ্চারণ করে। (বুখারি, হাদিস : ১১৮৬)