মানবসভ্যতার অধঃপতনের অন্যতম উপাদান মাদক। এর প্রভাবে মানুষ অমানুষে পরিণত হয়। মাদক মানুষকে হায়েনার চেয়ে নিকৃষ্ট করে তোলে। মাদকের প্রভাবে সমাজ ও রাষ্ট্র ধ্বংসের দিকে চলে। পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় শান্তি বিনষ্ট হয়।


গত ২৬ জুন ২০২৪ একটি গণমাধ্যম ‘মাদকের ভয়াবহতা, যুবসমাজের নৈতিক অধঃপতন ও আজকের বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনাসভা নিয়ে নিউজ করে। সেখানে তারা বক্তাদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার অংশ প্রকাশ করে, যার মধ্যে অন্যতম হলো—দেশের ৭০ লাখ লোক মাদক সেবন করে। বছরে সেবন করা মাদক এক লাখ কোটি টাকার সমপরিমাণ, যা দেশের বাজেটের প্রায় এক-চতুর্থাংশ।


উন্নয়ন বাজেটের ৫৬ শতাংশ। গত ১০ বছরে মাদকাসক্ত সন্তানের হাতে প্রায় ২০০ মা-বাবা মারা গেছেন।

একজন মানুষ কতটা নিকৃষ্ট হলে তার জন্মদাতা মা-বাবাকে হত্যা করার মতো জঘন্য অপরাধ করতে পারে! এ জন্যই পবিত্র কোরআনে মাদককে শয়তানের কর্ম বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে এবং তা থেকে মানুষকে দূরে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা, নিশ্চয়ই মদ, জুয়া, প্রতিমা-বেদি ও ভাগ্যনির্ধারক তীরসমূহ তো অপবিত্র শয়তানের কাজ।


সুতরাং তোমরা তা পরিহার করো, যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৯০)

এ ছাড়া মদ ইত্যাদি সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। মানুষের মধ্যে শত্রুতা সৃষ্টি করে। মাদককে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রায়ই বিভিন্ন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে, কখনো কখনো তা হত্যাকাণ্ড পর্যন্ত গড়াতেও দেখা যায়। যার ক্ষুদ্র একটি নমুনা ওপরে উল্লিখিত নিউজেই রয়েছে।


অথচ পবিত্র কোরআনে এ বিষয়ে দেড় হাজার বছর আগেই সতর্ক করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে এ ব্যাপারে ইরশাদ হয়েছে, ‘শয়তান শুধু মদ ও জুয়া দ্বারা তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চার করতে চায়। আর (চায়) আল্লাহর স্মরণ ও সালাত থেকে তোমাদের বাধা দিতে। অতএব, তোমরা কি বিরত হবে না?’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৯১)


এক কথায় মাদক মানুষকে বিপথগামী করার একটি শয়তানি অস্ত্র। শয়তান এর মাধ্যমে মানুষকে ইবাদত থেকে দূরে সরিয়ে দেয়, আল্লাহর রহমত থেকে বঞ্চিত করে, মানুষের মধ্যে শত্রুতা সৃষ্টি করে। আশরাফুল মাখলুকাত বা সৃষ্টির সেরা মানুষকে পশুর চেয়ে নিকৃষ্ট প্রাণীতে রূপান্তরিত করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মদ পানকারী ব্যক্তির ৪০ দিনের নামাজ কবুল করা হয় না। সে তাওবা করলে তবে আল্লাহ তাআলা তার তাওবা কবুল করেন। যদি আবার সে মদ পান করে, তাহলে আল্লাহ তাআলা তার ৪০ দিনের নামাজ কবুল করেন না। যদি সে তাওবা করে, তাহলে আল্লাহ তাআলা তার তাওবা গ্রহণ করেন। সে যদি আবার মদ পানে লিপ্ত হয়, তাহলে তার ৪০ দিনের নামাজ আল্লাহ তাআলা গ্রহণ করেন না। যদি সে তাওবা করে, আল্লাহ তাআলা তার তাওবা কবুল করেন। সে চতুর্থবার মদ পানে জড়িয়ে পড়লে আল্লাহ তাআলা তার ৪০ দিনের নামাজ গ্রহণ করেন না। যদি সে তাওবা করে, আল্লাহ তাআলা তার তাওবা কবুল করবেন না এবং তাকে ‘নাহরুল খাবাল’ থেকে পান করাবেন। প্রশ্ন করা হলো, হে আবু আবদুর রাহমান (ইবনু উমার), খাবাল নামক ঝরনাটি কী? তিনি বললেন, জাহান্নামিদের পুঁজের ঝরনা। (তিরমিজি, হাদিস : ১৮৬২)


ওপরোক্ত আলোচনা দ্বারা বোঝা যায়, মাদক মানুষকে দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত করে। তাদের ঈমান-আমল ধ্বংস করে। আমাদের উচিত এই মাদক থেকে নিজেরাও দূরে থাকা এবং নিজেদের পরিবার-পরিজন যেন এর ভয়াল থাবা থেকে মুক্ত থাকে, সে ব্যাপারে সজাগ থাকা। মহান আল্লাহ সবাইকে তাওফিক দান করুন। আমিন।