আজহার হোসেন সান্টু, বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক স্পিন অলরাউন্ডার। ডানহাতি ওপেনারও ছিলেন। ৭ ওয়ানডে ক্যারিয়ারে রান মাত্র ৯৪ এবং উইকেট ৪টি। উল্লেখ করার মতো নয় ক্যারিয়ার। একটি হাফ সেঞ্চুরির ইনিংস রয়েছে তার। ক্যারিয়ার সমৃদ্ধ না হলেও ওই একটি হাফ সেঞ্চুরিই আজহার হোসেনকে চিরস্থায়ী করেছে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে। ধ্রুবতারার মতো জ্বলজ্বল করবে ইনিংসটি। বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ৪৩৮টি ওয়ানডে খেলেছে। ক্রিকেটাররা নিয়মিত সেঞ্চুরি, হাফ সেঞ্চুরি করছেন। কিন্তু আজহার হোসেনের হাফ সেঞ্চুরির মাহাত্ম্যই আলাদা। ওই হাফ সেঞ্চুরির সঙ্গে জড়িয়ে আছে আবার শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের নাম। ‘মরুশহর’ শারজাতে ১৯৯০ সালে অস্ট্রাল-এশিয়া কাপে অংশ নিয়েছিল বাংলাদেশ। ওই আসরে গাজী আশরাফ হোসেন লিপুর দুটি ম্যাচ খেলে সবই হেরেছিল বাংলাদেশ। লিপু এখন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের প্রধান নির্বাচক। সেই মরুশহর শারজাহতে এখন নাজমুল হোসেন শান্তর নেতৃত্বে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৩ ওয়ানডে ম্যাচের সিরিজ খেলবে। শারজাহতে এবারই প্রথম ওয়ানডে সিরিজ খেলবে টাইগাররা। আগের দুটি ছিল টুর্নামেন্ট। ১৯৯০ সালে অস্ট্রাল-এশিয়া কাপ ও ১৯৯৫ সালে এশিয়া কাপ খেলেছিল বাংলাদেশ। ৫ ওয়ানডে খেলার অভিজ্ঞতাপুষ্ট বাংলাদেশের কাছে অপরিচিত নয় শারজাহ।
ক্রিকেট বিশ্বের পরিচিত ভেন্যু শারজাহ। এখানে টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-২০ ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। শারজাহতে ২০২১ সালে টি-২০ বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৩ রানে এবং শ্রীলঙ্কার কাছে ৫ উইকেটে হেরেছিল বাংলাদেশ। ২০২২ সালে এশিয়া কাপে আফগানিস্তানের কাছে হেরেছিল ৭ উইকেটে। ওয়ানডে ও টি-২০ মিলিয়ে ৮টি ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে টাইগারদের। টেস্ট না খেললেও শারজার পরিবেশ, উইকেট অপরিচিত নয় টাইগারদের কাছে। আচরণ সম্পর্কে ভীষণ ভালো জানেন ক্রিকেটাররা। এমন উইকেটে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের স্বপ্ন দেখতেই পারে নাজমুল বাহিনী। শনিবার ঢাকা ছাড়ার আগে তাওহিদ হৃদয় আফগানিস্তান সিরিজকে যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং বলেন। তিনি বলেন, ‘আফগানিস্তানের স্পিনাররা সব সময়ই ওদের শক্তির জায়গা। এটা আমরা সবাই জানি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রতিটা দলই শক্তিশালী। প্রতিটা দেশ তাদের সেরা ক্রিকেটারদের নিয়ে খেলে। তবে এসব নিয়ে বেশি চিন্তার কিছু নেই। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পারফর্ম করতে হলে এই চ্যালেঞ্জটা নিতে হবে। প্রতিপক্ষে কারা খেলছে, তাদের নিয়ে আমরা পরিকল্পনা করব। সেভাবে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করব।’
১৯৮৬ সালে দ্বিতীয় এশিয়া কাপে প্রথমবার ওয়ানডে খেলে বাংলাদেশ। দ্বিতীয়বার টুর্নামেন্ট খেলে ঘরের মাঠে ১৯৮৮ সালে। ১৯৯০ সালে তৃতীয় টুর্নামেন্টটি ছিল অস্ট্রাল-এশিয়া কাপ। ছয় দলের টুর্নামেন্টের এক গ্রুপে ছিল ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা এবং আরেক গ্রুপে বাংলাদেশ, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড। টুর্নামেন্টে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যচে লিপু বাহিনী হেরেছিল ১৬১ রানে। প্রথম ব্যাটিংয়ে ব্ল্যাক ক্যাপসরা মার্টিন ক্রোয়ের ৬৯, অ্যান্ড্রু জোন্সের ৯৩ ও জন রাইটের ৯৩ রানে ৪ উইকেটে ৩৩৮ রান করেছিল। মিনহাজুল আবেদীন নান্নু ৩৯ রানের খরচে নিয়েছিলেন ২ উইকেট। এ ছাড়া একটি করে উইকেট নিয়েছিলেন গোলাম নওশের প্রিন্স ও গোলাম ফারুক সুরু। পরের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরেছিল ৭ উইকেটে। প্রথম ব্যাটিং লিপু বাহিনী করেছিল ৮ উইকেটে ১৩৪। আমিনুল ইসলাম বুলবুল সর্বোচ্চ ৪১ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছিলেন। অস্ট্রেলিয়া ২৫.৪ ওভারেই টপকে গিয়েছিল টার্গেট। ১৯৯৫ সালে এশিয়া কাপে ভারতের কাছে ৯ উইকেটে, শ্রীলঙ্কার কাছে ১০৭ রানে ও পাকিস্তানের কাছে ৬ উইকেটে হেরেছিল। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সাইফুল ইসলামের বোলিং স্পেল ছিল ১০-২-৩৬-৪। যা বহুদিন বাংলাদেশের সেরা বোলিং ফিগার ছিল।
আগের ৫ ওয়ানডে হারের বৃত্ত থেকে এবার বের হতে মরিয়া টাইগাররা। আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি-২০ ম্যাচ খেললেও প্রথমবার ওয়ানডে খেলবে। অবশ্য মরুরাজ্য আবুধাবিতে ২০১৮ সালে দুটি ওয়ানডে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে দুই দলের। লিগ পর্বে ১৩৬ রানে টাইগাররা হারলেও শীর্ষ চারের ম্যাচে জিতেছিল ৩ রানে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে এখন পর্যন্ত ১৬টি ওয়ানডে খেলে টাইগারদের জয় ১০টি। হার ৬টি। দুই দল এবার চতুর্থবার ওয়ানডে সিরিজ খেলবে। ২০১৬ ও ২০২২ সালে বাংলাদেশ সিরিজ জিতলেও সর্বশেষ ২০২৩ সালে হেরেছিল টাইগাররা। এবার সিরিজের ম্যাচ তিনটি যথাক্রমে ৬, ৯ ও ১১ নভেম্বর।