প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় অগ্নিকান্ডের ঘটনা গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত ও বিচার-বিশ্লেষণ করছে সরকারের উচ্চপর্যায়ের কমিটি। একই সঙ্গে এ নিয়ে কাজ করছে সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা। পোড়া ভবন থেকে প্রাপ্ত আলামতেরও বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।
আগুন লাগার পর থেকেই কয়েকটি বিষয় সামনে রেখে তদন্ত কার্যক্রম চলছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে। সরকার গঠিত উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটির কাল প্রাথমিক প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা।
ভয়াবহ এ আগুনের ঘটনার পর থেকে দেশজুড়ে নানা আলোচনা-সমালোচনার পাশাপাশি মানুষের মধ্যে উদ্বেগ ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। সচিবালয়ে কর্মরতদের পাশাপাশি রহস্যঘেরা আগুন নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যেও।
সরকারের গঠিত উচ্চপর্যায়ের কমিটির এক সদস্য বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের কাজ চলছে। যথাসময়ে প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হবে।’
একটি সূত্র জানায়, আগুনের পর থেকেই এ নিয়ে নানা মুখরোচক গল্প তৈরি হচ্ছে মুখে মুখে। একে অন্যের ওপর দোষারোপও চলছে এ আগুন লাগা নিয়ে। তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র আগুনের ঘটনায় কয়েকটি বিষয়কে সামনে রেখে তদন্ত কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছে। এর মধ্যে দেশকে উত্তাল করতে এটা রাজনৈতিক সৃষ্ট কোনো নাশকতার অংশ কি না কিংবা শর্টসার্কিট থেকে ঘটনা কি না বা নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কারও দায়িত্ব অবহেলা কি না তা দেখা হচ্ছে। এ ছাড়া ই-নথির যুগ থাকার পরও কোনো মন্ত্রণালয়ের হার্ডকপি ধ্বংসের উদ্দেশ্যে কি না, উপসচিব হওয়া বা কোটা ইস্যুতে ২৫ ক্যাডারদের দ্বন্দ্বের জেরে এ ঘটনা কি না সেটিও দেখা হচ্ছে। সূত্র জানায়, অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ করতে যে কোনো রাজনৈতিক গোষ্ঠী এই অগ্নিকান্ডের মধ্য দিয়ে দেশে অস্থিরতা এবং অরাজকতা তৈরি করতে পারে। অনেকেই গত ফ্যাসিস্ট সরকারকে দোষারোপ করছে। উপদেষ্টারাও এ আশঙ্কাকে উড়িয়ে দিচ্ছেন না। একইভাবে গত সরকারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীসহ তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে শত শত কোটি টাকা লোপাটের বিষয় নিয়ে কাজ শুরু করেছে দুদকসহ বিভিন্ন সংস্থা। অগ্নিকান্ড সেসব তথ্য ধ্বংসের অংশ কি না তা-ও দেখা হচ্ছে। আগুন মধ্যরাতে লাগলেও আগের দিন সরকারি ছুটি ছিল। সে রাতে সচিবালয়ে নিরাপত্তার দায়িত্বে ভিতরে এবং বাইরে যেসব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত ছিলেন এবং পিডব্লিউডির অধীনে থাকা কেয়ারটেকারসহ প্রত্যেক সদস্যকে আলাদাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলেও জানা গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত মন্ত্রণালয়ের আশপাশের ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করার কথা জানা গেছে। তদন্তের স্বার্থে এখনই ভিডিওচিত্র বা বিশেষ তথ্য প্রকাশ করা যাবে না বলে সূত্রগুলো জানায়। গতকাল সচিবালয়ে দেখা যায়, তদন্ত কমিটি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ছাড়া কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা একাধিক সদস্য জানান, সকাল ১০টার পর আলামত সংগ্রহের জন্য সিআইডির ফরেনসিক টিমের সদস্যরা প্রবেশ করেছেন। এ ছাড়াও সিটিটিসি সদস্যদের প্রবেশ করতে দেখা যায়। র্যাব, পুলিশের বিশেষজ্ঞ দলও এ নিয়ে কাজ করছে। গতকাল বিকালে সরকারের উচ্চপর্যায়ের কমিটির দ্বিতীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সচিবালয়ের সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে সেখানে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনুকূলে ইস্যুকৃত স্থায়ী প্রবেশ পাস এবং সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ইস্যুকৃত অস্থায়ী প্রবেশ পাস ব্যতীত সব ধরনের অস্থায়ী প্রবেশ পাস বাতিল করেছে। সেই সঙ্গে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সাংবাদিকরাও অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড দিয়ে সেখানে প্রবেশ করতে পারবেন না। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা তৈরি হয়েছে। গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, অগ্নিকান্ডের ঘটনায় তদন্ত চলমান থাকার পরিপ্রেক্ষিতে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকারের বিষয়ে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এটা সাময়িক। দ্রুতই এ বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। জানা গেছে, পোড়া ভবনে থাকা মন্ত্রণালয়গুলো আজ থেকে বাইরে বিভিন্ন দপ্তর বা সংস্থা থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করবে। স্থানীয় সরকার ভবনের কার্যক্রম পরিচালিত হবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন থেকে। গতকাল বৈষম্যবিরোধী কর্মচারী ঐক্য ফোরাম সচিবালয়ে আগুনের ঘটনা নাশকতামূলক কর্মকান্ড বলে উল্লেখ করে বিবৃতি দিয়েছে। বিৃবতিতে বলা হয়, বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত খবর, প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্যে স্পষ্টতই বোঝা যায় এটি কোনো দুর্ঘটনা নয়। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়; ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ; স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ; শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়; সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ আগুনের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের নথিপত্র পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। গত বুধবার রাত প্রায় ২টায় আগুন লাগে সচিবালয়ে। ছয় ঘণ্টা পর বৃহস্পতিবার নিয়ন্ত্রণে আসে আগুন। তবে আগুন পুরোপুরি নেভাতে সময় লাগে ১০ ঘণ্টা।