দেশের উজান এলাকায় বন্যার কিছুটা উন্নতি হলেও ভাটি অঞ্চলে অবনতি হয়েছে। এর মধ্যে সিলেটে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। দুই দিন সিলেট এবং উজানে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় কমছে নদনদী এবং প্লাবিত এলাকার পানি। এতে আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে মানুষজন বাসাবাড়িতে ফিরছেন। পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে ভেসে উঠছে ক্ষতির চিত্র। স্রোতে ভেঙে গেছে প্লাবিত বিভিন্ন সড়ক। এখনো যোগাযোগবিচ্ছিন্ন রয়েছে সিলেটের অনেক এলাকা। গতকাল সিলেটের বিশ্বনাথে বন্যার পানিতে ডুবে সাড়ে তিন বছর বয়সি এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
এদিকে, হবিগঞ্জে খোয়াই নদীর পানি কমলেও অপরিবর্তিত রয়েছে কুশিয়ারা নদীর পানি। এতে বন্যাকবলিত এলাকায় চরম দুর্ভোগে রয়েছেন নবীগঞ্জ উপজেলার ২৫টি গ্রামের ৩০ হাজার মানুষ। তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি কমেছে। বেড়েছে ঘাঘট ও করতোয়ার পানি। তিস্তার পানি এখনো বিপৎসীমার ৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইলে যমুনা নদীর পানি বাড়ায় চরাঞ্চলের নিম্নভূমি তলিয়ে যাচ্ছে। এতে কৃষকের ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। জনগণের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য-
সিলেট : সিলেটে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। দুই দিন সিলেট এবং উজানে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় কমছে নদনদী এবং প্লাবিত এলাকার পানি। এতে আশ্রয়কেন্দ্র ছেড়ে মানুষজন ফিরছেন বাসাবাড়িতে। জেলা প্রশাসনের সর্বশেষ তথ্যমতে, গতকাল দুপুর পর্যন্ত পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা সাড়ে ৯ লাখে দাঁড়িয়েছে। এর আগের দিন এ সংখ্যা ছিল প্রায় সাড়ে ১০ লাখ। গতকাল দুপুর পর্যন্ত সিলেট মহানগর ও জেলায় ২২ হাজার ৬২৩ জন আশ্রয়ে ছিলেন। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে সরকারি-বেসরকারিভাবে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত আছে। পৌঁছানো হচ্ছে নিরাপদ পানি ও ওষুধপত্র। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সিলেট কার্যালয় সূত্র জানায়, গতকাল বিকালে সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। তবে এ নদীর পানি সিলেট পয়েন্টে রয়েছে বিপৎসীমার নিচে। একই সময়ে কুশিয়ার নদীর পানি আমলশীদ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১২, ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ১০২ ও শেরপুর পয়েন্টে ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
বিশ্বনাথ (সিলেট) : বিশ্বনাথে বন্যার পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে ভেসে উঠছে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র। স্রোতে ভেঙে গেছে প্লাবিত বিভিন্ন সড়ক। যোগাযোগবিচ্ছিন্ন রয়েছে অনেক এলাকা। এখনো পানির নিচে অনেক গ্রামীণ সড়ক। বন্যার পানিতে লন্ডভন্ড হয়েছে বীজতলা, ফসলের মাঠ, মাৎস্য খামার। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অনেক বসতবাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় আশ্রয় কেন্দ্র থেকে লোকজন বাড়িঘরে ফিরতে শুরু করেছেন। এদিকে, গতকাল বেলা আড়াইটার দিকে বন্যার পানিতে ডুবে মো. ওয়াহিদ মিয়া নামের সাড়ে তিন বছর বয়সি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। সে উপজেলার দশঘর ইউনিয়নের বাইশঘর (উত্তরপাড়া) গ্রামের মো. দবির মিয়ার ছেলে। শিশুর পিতা মো. দবির মিয়া জানান, দুপুুরে বসতঘরেই ঘুুমিয়েছিল শিশু ওয়াহিদ। এ সময় তার মা সাংসারিক কাজে ঘরের বাইরে ছিলেন। বেলা আড়াইটার দিকে তিনি ঘরে প্রবেশ করে দেখেন ছেলে বিছানায় নেই। একপর্যায়ে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে বন্যার পানিতে তাকে ভাসতে দেখেন। পরে উদ্ধার করে দ্রুত পার্শ্ববর্তী জগন্নাথপুর উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। আমাদের ধারণা, ঘুম থেকে উঠে হয়তো জানালা দিয়ে বন্যার পানিতে পড়ে যায় সে।
হবিগঞ্জ : হবিগঞ্জে খোয়াই নদীর পানি কমলেও অপরিবর্তিত রয়েছে কুশিয়ারা। এতে বন্যাকবলিত এলাকায় চরম দুর্ভোগে রয়েছেন নবীগঞ্জ উপজেলার ২৫টি গ্রামের ৩০ হাজার মানুষ। হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম হাসনাইন মাহমুদ জানান, শনিবার সকালে কুশিয়ারার পানি নবীগঞ্জের শেরপুর পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার, মার্কুলি পয়েন্টে ৩৩ এবং আজমিরীগঞ্জ ৬৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
সুনামগঞ্জ : টানা ছয় দিন সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার পর গতকাল ১২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আরও কমবে নদীর পানি। জেলার অপরাপর নদী যাদুকাটা, কুশিয়ারা, খাসিয়ামারা, বৌলাইয়ের পানিও কমেছে। স্থানীয় সূত্র জানায়, জেলার দোয়ারাবাজার, ছাতক, সদর, জামালগঞ্জ, বিশ্বম্ভরপুর তাহিরপুর, মধ্যনগর, দিরাই, শাল্লা, শান্তিগঞ্জসহ বিভিন্ন উপজেলার নিম্নাঞ্চলের মানুষ এখনো দুর্ভোগে রয়েছেন। হাওড়গুলো পরিপূর্ণ থাকায় ধীরে ধীরে কমছে হাওড়ের পানি। হাওড়াঞ্চলে অনেক বসতভিটা ও গ্রামীণ সড়ক এখনো পানিতে নিমজ্জিত।
গাইবান্ধা : গাইবান্ধায় তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি কমতে শুরু করেছে। এই দুই নদনদীর পানি কমলে তিস্তার পানি এখনো বিপৎসীমার ৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে বেড়েছে ঘাঘট ও তিস্তার পানি। ফলে নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষের মধ্যে বন্যা আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। গতকাল বিকাল ৩টায় গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ সূত্র জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ৫২ সেমি. হ্রাস পেয়ে বেলা ৩টা পর্যন্ত তিস্তার পানি (কাউনিয়া পয়েন্টে) বিপৎসীমার ৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ৭ সেমি. কমে বিপৎসীমার ৮৩ সেমি. নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় ঘাঘট নদীর পানি ৫ সেমি. বৃদ্ধি পেয়ে ১২৪ সেমি ও করতোয়া নদীর পানি ৩৩ সেমি, বেড়ে বিপৎসীমার ১৪৩ সেন্টেমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
রংপুর : রংপুরে তিস্তা নদীর পানি কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গতকাল সন্ধ্যায় ৬টায় ২৮ দশমিক ৭২ সেন্টিমিটারে প্রবাহিত হওয়ায় মানুষের মাঝে কিছুটা স্বস্তি ফিরে এসেছে।
কুড়িগ্রাম : কয়েকদিন ধরে জেলার ১৬টি নদনদীর পানি বেড়ে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হলেও শুক্রবার সন্ধ্যে থেকে তা কমতে শুরু করেছে। এ অবস্থায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। গতকাল বিকাল ৩টায় স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় সবকটি নদনদীর পানি কমলেও কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি এখনো বিপৎসীমা ওপর দিয়ে বইছে। এর মধ্যে তিস্তার কাউনিয়া পয়েন্টে ৩২ সেন্টিমিটার পানি কমে বিপৎসীমার ৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে, শিমুলবাড়ি পয়েন্টে ধরলার পানি বিপৎসীমার ৩১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে এবং দুধকুমার নদের পাটেশ্বরী পয়েন্টে ৯১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে এখনো বন্যা পরিস্থিতি জেলায় অপরিবর্তিত রয়েছে। জেলার নিম্নাঞ্চলগুলোতে পানি থাকায় পানিবন্দি মানুষ এখনো রয়েছে বিপাকে।
লালমনিরহাট : পানি কমলেও ভোগান্তি কমেনি তিস্তা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলের মানুষের। গতকাল সকাল ৬টায় বিপৎসীমার ৫১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সিরাজগঞ্জ : যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জে গত পাঁচ দিন ধরে বাড়ছে। ফলে চরাঞ্চলের নিম্নভূমি তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকের ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। কাঁচা রাস্তা তলিয়ে যাওয়ায় চলালেও ব্যাহত হচ্ছে। অন্যদিকে পানি বাড়ায় যমুনার অরক্ষিত অঞ্চল কাজিপুরের চরাঞ্চল, সদরের কাওয়াকোলার চর, শাহজাদপুরের কৈজুরী-পাচিল এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন ও বন্যা আতঙ্কে দিন পার করছেন যমুনাপাড়ের মানুষ।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র বলছে, গতকাল সকালে সিরাজগঞ্জ শহররক্ষা বাঁধ হার্ড পয়েন্টে যমুনার পানির সমতল রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৮ মিটার। গত ২৪ ঘণ্টায় ১১ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৮২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে (বিপৎসীমা-১২ দশমিক ৯০ মিটার)। পানি বাড়ায় জেলার পাঁচটি উপজেলার চরাঞ্চলের নিম্নভূমি প্লাবিত হয়ে পড়েছে। অনেকের বসতভিটার চারপাশে পানি থইথই করছে। এ কারণে চলাচলেও নানা প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে। এ ছাড়া পানি বাড়ায় ভাঙনের কবলে পড়ে শত শত হেক্টর ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। অনেক স্থানে বসতভিটা নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে। সিরাজগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান জানান, যমুনা নদীর পানি আরও তিন দিন বাড়তে পারে। এতে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত পারে। এ কারণে ছোট বা মাঝারি বন্যা হতে পারে।
টাঙ্গাইল : উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে যমুনা নদীতে পানি বাড়ছে। একই সঙ্গে শুরু হয়েছে নদীর পাড় ভাঙন। বিগত ভাঙনের পর যেটুকু সম্বল বেঁচে ছিল, সেটিও ভাঙনের আশঙ্কায় চরম হতাশায় দিন পার করছেন নদীপাড়ের শত শত ভাঙনকবলিত মানুষ। ইতোমধ্যে কিছু কিছু এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে।
সরেজমিন দেখা যায়, ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের চিতুলিয়াপাড়া, ভালকুটিয়া, কষ্টাপাড়া ও নিকরাইল ইউনিয়নের মাটিকাটা, পাটিতাপাড়া, কোনাবাড়ী এলাকাসহ কয়েকটি এলাকায় কয়েক দিন ধরে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ফলে দিশাহারা নদীপাড়ের মানুষ।
নদীপাড়ের মানুষ অভিযোগ করে বলেন, গত বছর ভাঙনরোধে খানুরবাড়ী, চিতুলিয়াপাড়াসহ বিভিন্ন স্থানে নামমাত্র নিম্নমানের জিওব্যাগ ফেলে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড। সেগুলো এখন ধসে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া প্রভাবশালী ব্যক্তিরা প্রভাব খাটিয়ে নিজ নিজ বাড়ির সামনে জিওব্যাগ ফেলে। দরিদ্র পরিবারের বাড়ির সামনে জিওব্যাগ ফেলা হয় না। এ ব্যাপারে টাঙ্গাইলের পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ভাঙন এলাকার মধ্যে গোবিন্দাসী ও নিকরাইলের জন্য একটি প্রকল্প জমা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ওই এলাকার ইকোনোমিক জোনের কাজ শুরু হলে স্থায়ী বাঁধ হয়ে যাবে।
Ken Hayter
Was just browsing the site and was impressed the layout. Nicely design and great user experience. Just had to drop a message, have a great day! 8dfds87a