‘মতিউরের হাজার কোটি টাকার খেত খাইল ১৫ লাখ টাকার ছাগলে’- প্রবাদ বচনের মতো কথাটি এখন শোনা যাচ্ছে প্রশাসনের সর্বত্র। ঈদের ছুটি শেষে অফিস খোলার পর থেকেই এরকম নানা আলোচনা চলছে কর্মকর্তাদের মধ্যে। সচিবালয়ে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের পরপর চারজন কমকর্তার দুর্নীতি সামনে আসার পর প্রশাসনে চলছে তোলপাড়। প্রকাশ্যে কেউ কিছু না বললেও বিভিন্ন রুমে কর্মকর্তাদের মধ্যে চলছে ফিসফাঁস। সেই সঙ্গে চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আছেন নানা আতঙ্কে। তবে পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে সেটি পর্যবেক্ষণ করছেন অনেকেই। সাবেক আমলারা বলছেন, দুর্নীতি দমন করতে দরকার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের অঢেল সম্পদ অর্জনের বিষয় সামনে আসার পর একের পর এক দুর্নীতির চিত্র প্রকাশ পাচ্ছে। দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টিও আলোচনায় আসে। এর পর কোরবানির ঈদের ছুটির মধ্যেই বিপুল সম্পদ অর্জন নিয়ে আলোচনায় আসে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিমএপি) সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। সব ছাপিয়ে যায় ১৫ লাখ টাকার ছাগলকা । জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য মো. মতিউর রহমানের ছেলের ১৫ লাখ টাকার ছাগল সামনে নিয়ে আসে বাবার অবৈধ হাজার কোটি টাকা সম্পদ অর্জনের ঘটনা। মতিউরের ঘটনার মধ্যেই এনবিআরের প্রথম সচিব কাজী আবু মাহমুদ ফয়সাল ও তার পরিবারের সদস্যদের দুর্নীতি চিত্র ফাঁস হয়েছে। একের এক কর্মকর্তাদের দুর্নীতি চিত্রে আলোড়ন সৃষ্টি হচ্ছে। প্রশাসনে চলছে নানা আলোচনা। একজন মানুষ এত টাকার মালিক হয় কীভাবে, এত টাকা দিয়ে কী করবে, মতিউর কেমন মানুষ, যিনি সম্পদ বাঁচাতে নিজের সন্তানকে অস্বীকার করেন ইত্যাদি। নাম প্রকাশ না করে একজন সিনিয়র সচিব বলেন, ‘মানুষের টাকা-পয়সা দরকার, তাই বলে এত সম্পদ? যে সম্পদ মানসম্মান ধুলোয় মিশিয়ে দেয় তা অর্জন না করাই ভালো। এসব কর্মকর্তার কারণে আমাদের সম্মানহানি হচ্ছে। সারা জীবন চাকরি করেছি, সম্মান পেয়েছি, সম্মান নিয়ে অবসরে যেতে চাই।’ যুগ্ম সচিব পর্যায়ের এক কর্মকতা বলেন, ‘এসব কর্মকর্তার কারণে নিজেরাও লজ্জা পাচ্ছি’। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমার মনে হয় ট্যাক্সে যারা কাজ করেন তারা কোনো কোম্পানির কাছ থেকে সুবিধা নিলে সেটি দেশের বাইরেই সেরে ফেলেন। দেশে কোনো লেনদেনই হয় না। এসবের একটা লাগাম টানা খুব দরকার।’