‘আগামীতে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করতে পারলে তারেক রহমানকে (বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান) লন্ডন থেকে ধরে নিয়ে এসে তাঁর শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।’ ২০২৩ সালের ৩০ ডিসেম্বর টুঙ্গিপাড়ায় এক নির্বাচনি জনসভায় এ কথা বলেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। ৩১ ডিসেম্বর দেশের সব গণমাধ্যমে তাঁর সেই বক্তব্য গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করা হয়েছিল। এক বছরের ব্যবধানে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশ ছেড়ে এখন ভারতে অবস্থান করছেন। বর্তমান বাস্তবতায় দেশের সর্বস্তরের মানুষের মুখে মুখে ফিরছে তারেক রহমানকে নিয়ে শেখ হাসিনার গত ডিসেম্বরের সেই বক্তব্য। কে কাকে ফেরত এনে শাস্তি নিশ্চিত করবে। হায়! কার শাস্তি কে দেয়!! ইতোমধ্যে এই প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে গণহত্যা, গুম, দুর্নীতি ও বিদেশে অর্থ পাচারসহ নানা মামলা দায়ের করা হয়েছে। ভারত থেকে ফিরিয়ে এনে তাঁর বিচার ও শাস্তির দাবি উঠেছে। সরকারের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর জন্য ভারত সরকারের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। দিল্লি ঢাকার সেই চিঠিও গ্রহণ করেছে। এদিকে বিএনপিও ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার বিচার দাবি করেছে। দলটি ঘোষণা দিয়েছে, আগামীতে জনগণের সমর্থনে বিএনপি ক্ষমতায় যেতে পারলে তারা শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিত করবে। অন্যদিকে খুব শিগগিরই তারেক রহমান বীরের মতো বাংলাদেশে ফিরবেন বলে সূত্রে জানা গেছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট পতন হয় আওয়ামী লীগ সরকারের। আন্দোলন ঠেকাতে শত শত মানুষ হত্যার অভিযোগ ওঠে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ও তাঁর ঘনিষ্ঠজনদের বিরুদ্ধে। মানবতাবিরোধী অপরাধ উল্লেখ করে যেসব হত্যার বিচারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে পুনর্গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। আর এই বিচারকে অগ্রাধিকার তালিকায় স্থান দেওয়ার কথা জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনাসহ অন্যদের বিরুদ্ধে কবে নাগাদ মানবতাবিরোধী অপরাধের আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হবে, তা নিয়ে দেশবিদেশে আলোচনা ও কৌতূহল রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কাঙ্ক্ষিত সময়ে তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া গেলে আগামী এপ্রিলে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বিচার শুরু হতে পারে। এরপর কয়েক মাসের মধ্যে সাক্ষ্য গ্রহণ ও যুক্তিতর্কের শুনানি শেষ হতে পারে। আর এসব ধাপ শেষে ২০২৫ সালের শেষের দিকে রায় আশা করছেন তারা। এ বিষয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী বলেন, শেখ হাসিনা ও তাঁর দোসরদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। অন্যথায় দেশের মানুষ আন্দোলনের সুফল পাবে না।
এদিকে তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে এনে শাস্তি দেব এমন কথা বলা হলেও সেই তারেক রহমানের ফেরার পথ প্রশস্ত হচ্ছে। বিশেষ করে একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় বেকসুর খালাস পাওয়ার পর বিএনপির সর্বস্তরের নেতা-কর্মীসহ সাধারণ জনগণের তিনি কবে ফিরছেন এ নিয়ে আগ্রহ বেড়েছে। আইনজীবীরা বলছেন, ৫ আগস্টের পর থেকে তারেক রহমানের মোট ৩৯টি মামলা বাতিল বা খারিজ কিংবা খালাস পেয়েছেন। এর মধ্যে একটি মামলায় তিনি খালাস পেয়েছেন। আরেকটি মামলার সাজা স্থগিত হয়েছে। আর বাকি ৩৮টির মধ্যে কোনো কোনো মামলা বাতিল হয়েছে, আবার কোনোটি খারিজ হয়েছে। ৩৫টির মতো মামলা আছে বিচারাধীন, এগুলো সব মানহানি মামলা। দ্রুতই এগুলো শেষ হবে আশা করছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির কেন্দ্রীয় আইনবিষয়ক সম্পাদক ও তারেক রহমানের আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সব মিলিয়ে ৮০ থেকে ৮২টি মামলা করা হয়েছিল। ৫টি মামলায় তার দণ্ড হয়েছে। এর মধ্যে একটিতে খালাস পেয়েছেন। একটির সাজা স্থগিত হয়েছে। তিনটি আদালতে বিচারাধীন আছে, এখন পর্যন্ত নিষ্পত্তি হয়নি।