যানবাহনের যত্রতত্র হাইড্রোলিক হর্ন, নানা ধরনের সাউন্ড সিস্টেম, নির্মাণকাজে ব্যবহৃত ঢালাই মেশিনের বিরামহীন উচ্চ শব্দে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে খুলনা শহরের জনজীবন। সেই সঙ্গে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রচারণা, পণ্য বিক্রি ও সভা-সমাবেশের তথ্য জানাতে নিয়মনীতি ছাড়াই চলছে মাইকের ব্যবহার। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছে নগরবাসী। এদিকে নগরীতে অসহনীয় শব্দদূষণের কথা স্বীকার করে পরিবেশ অধিদপ্তর খুলনা বিভাগীয় কার্যালয় এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মমতাজ বেগম বলেন, শহরের গুরুত্বপূর্ণ কিছু এলাকায় দিন-রাত শব্দদূষণ অসহনীয় মাত্রায় পৌঁছেছে। এতে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন ও কানে কম শুনছেন। শব্দদূষণের বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালানো হবে বলেও জানিয়েছেন এ কর্মকর্তা।
সরেজমিন দেখা যায়, নগরীর গোবরচাকা প্রধান সড়কে বিকট শব্দে বুুলডোজার দিয়ে রাস্তা খননের কাজ চলছে। একইভাবে হাজী ইসমাইল রোডে ড্রেনেজ নির্মাণকাজ ও সোনাডাঙ্গা আবাসিকে বহুতল ভবন নির্মাণে মেশিন দিয়ে ইট ভাঙা হচ্ছে। সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড, ময়লাপোতার মোড়, সাতরাস্তার মোড়সহ বিভিন্ন স্থানে সড়কে যানবাহনের উচ্চ শব্দে বিরক্ত সাধারণ মানুষ। এ বিষয়ে সচেতন নাগরিকদের সংগঠন খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার বলেন, শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা-২০০৬ অনুযায়ী অফিস, হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আবাসিক এলাকায় যখন-তখন মাইক বা শব্দ সৃষ্টিকারী যন্ত্র ব্যবহার করা যায় না। গুরুত্বপূর্ণ কাজে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে দিনে সর্বোচ্চ ৫ ঘণ্টা মানমাত্রার চেয়ে বেশি ব্যবহার করা যাবে। শব্দদূষণে কারাদণ্ড জরিমানার ব্যবস্থা থাকলেও এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতা দেখা যায়। পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, নীরব ঘোষিত এলাকায় সর্বোচ্চ ৫০ ডেসিবেল ও আবাসিক এলাকায় ৫৫ ডেসিবেলের বেশি মাত্রার শব্দ সৃষ্টির সুযোগ নেই। শব্দের মাত্রা ৮০ ডেসিবেলের বেশি হলে তা শরীরের ক্ষতি করে। সেখানে নগরীতে সর্বোচ্চ মাত্রা ১৩২ ডেসিবেল পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছে। গল্লামারীর মোড়ে প্রায় প্রতিদিনই ৮২-৯৫ ডেসিবেল, ফুলবাড়ী গেট ৭৮-৮৫, সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডে ৮০-৯০ ডেসিবেল, বিএল কলেজ মোড়ে ৭৩-৮২, শান্তিধাম ৬২-৮০, পিটিআই মোড়ে ৭০-৮০ ডেসিবেল ও ডাকবাংলা মোড়ে ৭৫-৮৫ ডেসিবেল শব্দের সর্বোচ্চ মাত্রা দেখা যায়। আইন অমান্য করে যত্রতত্রই বাজানো হচ্ছে উচ্চ শব্দের হর্ন।
এদিকে শব্দদূষণ রোধে অভিযান পরিচালনা করছে পরিবেশ অধিদপ্তর। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১২ ডিসেম্বর নগরীর বয়রা মোড়ে অভিযান চালিয়ে সাতটি পরিবহন থেকে হাইড্রোলিক হর্ন জব্দ করা হয়। একই সঙ্গে বাস চালককে সতর্ক ও জরিমানা করা হয়। নগরীর শব্দদূষণের বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে নিয়মিত অভিযান চালানো হবে বলে জানিয়েছেন অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মমতাজ বেগম।