শীতের শুষ্কতায় প্রতিটি মানুষের প্রসাধনীর প্রয়োজনীয়তা বিশেষ করে ত্বকের যত্নের সঙ্গে সম্পর্কিত পণ্যের চাহিদা বাড়ে। বাজারে হাত-পা থেকে শুরু করে মাথার সেবার বিভিন্ন ধরনের পাঁচ শর বেশি প্রসাধনীসামগ্রী রয়েছে। তবে এসবের কোনটা আসল কোনটা নকল অনেক সময় খোদ বিক্রেতারাও জানেন না। দেশে চাহিদার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে এসব ভেজাল, নকল, মানহীন, অনুমোদনহীন ও মেয়াদোত্তীর্ণ প্রসাধনীসামগ্রী। প্রতিরোধে কঠোর ব্যবস্থা না নেওয়ায় দিনদিন এসব পণ্যে সয়লাব হচ্ছে বাজার। বিদেশ থেকে চোরাই পথে বিপুল পরিমাণে নিম্নমানের ভেজাল প্রসাধনী ঢুকছে দেশে। রংচঙা আকর্ষণীয় মোড়কে এসব প্রসাধনী বিভিন্ন ব্র্যান্ডের নামে বিক্রি হয়। নকল ও মানহীন বিদেশি পণ্য ব্যবহার করে একদিকে ভোক্তারা যেমন স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন, অন্যদিকে দেশীয় শিল্প খাত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজধানীর চকবাজারের এক ব্যবসায়ী জানান, স্থানীয় বিভিন্ন কোম্পানি ও বিদেশি নামিদামি কোম্পানির পণ্য হুবহু একই ব্র্যান্ড অথবা নামের একটি অক্ষর পরিবর্তন করে বিক্রি হয়। বিদেশি পণ্যের ক্ষেত্রে খালি কৌটা কিনে নকল পণ্য ঢোকানো হয়। যখন এসব পণ্য দোকানে বিক্রি হয় তখন আসল পণ্যের সঙ্গে এগুলোর দামের অনেক পার্থক্য থাকে। অনেকে আসল-নকল বুঝতে না পেরে এগুলো কিনে প্রতারিত হচ্ছেন।


রাজধানীর ফুটপাত থেকে শুরু করে বিভিন্ন বাজার এবং শপিং মলে এসব ভেজাল ও নকলসামগ্রী সরবরাহ করা হচ্ছে। আবার প্রান্তিক পর্যায়ে ফেরি করেও বিক্রি করা হয় ক্ষতিকর এসব প্রসাধনী। আসল নামে তৈরি করা এসব নকল পণ্য খুবই কম মূল্যে বাজারে ছাড়া হয়। এতে করে ভোক্তারা স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন।


নকল প্রসাধনী উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ বন্ধে পদক্ষেপ নিতে সম্প্রতি অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। ভোক্তা অধিকার এক ধরনের মানবাধিকার যা কতিপয় স্বার্থান্বেষী ও অসাধু ব্যবসায়ীর কারণে ও যথাযথ তদারকির অভাবে বিঘ্ন হতে পারে। নিরাপদ পণ্য বা সেবা নিশ্চিত করার জন্য আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারের একাধিক সংস্থা সম্পৃক্ত হলে বৃহৎ পরিসরে ইতিবাচক ফলাফল সম্ভব বলে সম্প্রতি জানিয়েছেন কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ।


বিএসটিআই সহকারী পরিচালক (সিএম) নোভেরা বিনতে নূর বলেন, বিএসটিআই চেষ্টা করছে পণ্যের মান নিশ্চিতের পর যেন বাজারজাত হয়। নতুন পণ্যের বাজারজাতকরণের আগে পণ্য, মোড়কসহ সব বিষয়ের মান নিয়েও কাজ করছে বিএসটিআই। অবৈধ পথে যে পণ্য আসে সেগুলোর বিষয়ে আমরা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছি। গত বছর প্রসাধনী নিয়ে আমরা ৮১টি অভিযান পরিচালনা করেছি। এতে ৯৮টি মামলায় বিভিন্ন পরিমাণে অর্থদন্ড ও কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া নকল বিভিন্ন ব্র্যান্ডকে আমরা নিষিদ্ধ করেছি।


অ্যাসোসিয়েশন অব স্কিন কেয়ার অ্যান্ড বিউটি প্রোডাক্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্ট বাংলাদেশ-এর সাধারণ সম্পাদক জামাল উদ্দীন বলেন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ভেজাল রোধে কাজ করছে। ফলে মানুষের মাঝে সচেতনতা বেড়েছে। আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে মানহীন পণ্যের বাজারজাতকরণ ঠেকাতে না পারলে দেশীয় বিনিয়োগ ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।