বিগত ১৫ বছরে এমন দুর্দশায় পড়েনি সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)। উন্নয়ন তো দূরের কথা, নৈমিত্তিক কাজগুলো চালিয়ে নিতেও হিমশিম খাচ্ছে নগরভবন। নগরজুড়ে পড়ে থাকা অর্ধসমাপ্ত কাজগুলো যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। অর্থসংকটে প্রায় ১০০ কোটি টাকার উন্নয়নকাজ থমকে আছে। বাইরের চিত্রের মতো ভিতরেও একই অবস্থা। টাকাকড়ির টানাটানিতে ‘নগরসংসার’ চালানোই দুরূহ হয়ে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটির। অর্থসংকটের কারণে উন্নয়ন কাজ থমকে আছে। আর যেসব কাজ চলছে সেগুলোর ক্ষেত্রেও ঠিকাদারদের বিল ঠিকমতো পরিশোধ করতে পারছে না নগর কর্তৃপক্ষ। ঠিকাদারদের ৫০ কোটি টাকার মতো বিল পাওনা রয়েছে নগর কর্তৃপক্ষের কাছে। ঠিকাদাররা কাজ ফেলে রেখেই তাই চলে গেছেন। আর নগরের উন্নয়নে নেওয়া ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকার প্রকল্প বাতিল হয়ে গেছে ৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর।


সিসিকের এলাকা দ্বিগুণ হওয়ায় বেড়েছে উন্নয়নকাজের প্রয়োজনীয়তা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী মেয়র হিসেবে সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব নেওয়ার পর নগরের উন্নয়নে কয়েকটি প্রকল্প হাতে নেয়। ২০২৪ সালের এপ্রিলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প জমা দিয়েছিলেন। সড়ক, ড্রেন, ছড়া-খাল, কালভার্ট, ওয়াকওয়ে, স্ট্রিট লাইট, ফুটপাতসহ বিভিন্ন উন্নয়নকাজ পরিচালনার জন্য প্রথমে তিনি ২ হাজার ৭০০ কোাটি টাকার প্রকল্প জমা দিয়েছিলেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে। ওই প্রকল্প জমা দেওয়ার পরের মাসে অর্থাৎ ২০২৪ সালের মে মাসে স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্ম সচিব মো. শামীম আলমের নেতৃত্বে মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধি দল সিলেট আসে। তিন দিন সিলেটে অবস্থান করে ঢাকায় ফিরে গিয়ে তারা প্রকল্পটির আকার কমিয়ে আনেন আড়াই হাজার কোটি টাকায়। এর পর ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ক্ষমতার পালা বদল ঘটে। ওলট-পালট হয় সবকিছুতেই। পরে প্রকল্পটিরই ‘অকালমৃত্যু’ ঘটে। গত ৫ সেপ্টেম্বর প্রকল্প যাচাই কমিটির সভায় স্থানীয় সরকার সচিব আবু হেনা মোর্শেদ জামান প্রকল্পটি বাতিল করে দেন। আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর পাঠানো প্রকল্পটি অপ্রয়োজনীয় উল্লেখ করে তা বাতিল করা হয়।


এদিকে, ২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যা ও ২০২৪ সালের দুই দফা বন্যায় নগরীর রাস্তাগুলো ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সে ক্ষতও সামাল দিতে পারেনি সিসিক। ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক ও ড্রেন সংস্কারে মন্ত্রণালয়ে চাওয়া হয়েছিল ৫৮৮ কোটি টাকা। বিপরীতে বরাদ্দ আসে মাত্র ২ কোটি। ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর এ খাতেও আর নতুন করে কোনো বরাদ্দের ব্যবস্থা হয়নি। প্রলেপ না পড়ায় দিনে দিনে তাই রাস্তার সে ক্ষতগুলো আরও বিস্তৃত হচ্ছে।  


সিসিকের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান নগরভবনের দুরবস্থার কথাটি অকপটেই স্বীকার করে নেন। তিনি জানান, অর্থসংকটে সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়েছে। উন্নয়নকাজ তো থমকে আছেই, জরুরি কাজগুলো সম্পাদনেও হিমশিম খেতে হচ্ছে। তিনি জানান, জরুরি সংস্কার কাজের জন্য সেপ্টেম্বর ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছিল এখনো কোনো সাড়া মেলেনি। নূর আজিজুর রহমান বলেন, অর্থসংকটের কারণে ঠিকাদারদের অন্তত ৫০ কোটি টাকার বিল দেওয়া যাচ্ছে না। এ ছাড়া শত কোটি টাকার প্রকল্পে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।