মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের চলমান সংঘাতের প্রভাবে ৯ দিন বন্ধের পর কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দরে আবারও এসেছে মাছের কার্গো বোট। গতকাল ভোরে ১০৮ টন ইলিশ, রুই ও কাতলা মাছ নিয়ে একটি কার্গো বোট মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন থেকে টেকনাফ স্থলবন্দর ঘাটে পৌঁছেছে। সর্বশেষ ৬ ডিসেম্বর মিয়ানমার থেকে মাছের কার্গোবোট এসেছিল।
এ বিষয়ে টেকনাফ স্থলবন্দর ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্টের ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘৯ দিন বন্ধের পর মিয়ানমার থেকে ১০৮ টনের একটি মাছের বোট এসেছে। সেখানে চারজন ব্যবসায়ীর মাছ রয়েছে। বোটে ইলিশ, রুই ও কাতলা মাছ রয়েছে। সেগুলো খালাস চলছে।’ প্রসঙ্গত গত ৮ ডিসেম্বর মিয়ানমারের মংডু শহর দখলের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ-মিয়ানমার ২৭০ কিলোমিটার সীমান্ত আরাকান আর্মির দখলে চলে যায়। মংডু শহর দখলে নিতে কয়েক সপ্তাহ আগে মিয়ানমার সেনাবাহিনী এবং আরাকান আর্মির মধ্যে তুমুল যুদ্ধ শুরু হলে আশ্রয়ের আশায় ঘরবাড়ি ছাড়তে শুরু করে রোহিঙ্গারা। এসব রোহিঙ্গা এখন বিচ্ছিন্নভাবে বাংলাদেশ সীমান্তে বসবাস করছে। এর পর থেকেই মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে থাকা ৫ লাখের মতো রোহিঙ্গার বাংলাদেশে প্রবেশের আশঙ্কা করা হচ্ছিল। জানা গেছে, প্রথমদিকে আরাকান আর্মির সঙ্গে রোহিঙ্গাদের একটা ভালো সম্পর্ক ছিল। কিন্তু কয়েক মাস ধরে রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন-আরএসও মিয়ানমারের জান্তাবাহিনীর প্ররোচনায় আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে অবস্থান নিলে তাদের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হয়। ফলে আরাকান আর্মির দ্বারা নিগৃহীত হয়ে যে কোনো সময় বাংলাদেশে আবারও রোহিঙ্গার ঢল নামতে পারে। যদিও কিছু কিছু পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গা প্রবেশ করছে কয়েক দিন ধরে। এর মধ্যে মংডু টাউনের পাশের পাঁচটি গ্রাম সুধাপাড়া, মংনিপাড়া, সিকদারপাড়া, উকিলপাড়া, নুরুল্লাপাড়া দখল করে ৪০ থেকে ৫০ হাজার রোহিঙ্গাকে উচ্ছেদ করেছে বিদ্রোহী আরাকান আর্মি। সীমান্তে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উখিয়ার পালংখালীর আনজুমান পাড়া, নাইক্ষ্যছড়ির ঘুমধুম, আশারতলী, ফুলতলা, চাকঢালা, তুমব্রু, লেমুছড়ি দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটছে। রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঢুকতে দুই দেশের দালালরা সহযোগিতা করছে বলে দাবি করেছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। তারা বলছেন, উখিয়া-টেকনাফ সীমান্তে রয়েছে দুই শতাধিক দালাল। তাদের মাধ্যমে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ঢুকছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রথমে মিয়ানমারের রাখাইন থেকে তারা হেঁটে আসেন। রাতে ঝোঁপঝাড়ে অবস্থান করেন। ভোরে সুযোগ বুঝে মানুষের সঙ্গে মিশে গিয়ে এপারে চলে আসেন। এ জন্য দালালেরা জনপ্রতি ৫ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়ে থাকেন। এদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, সীমান্তবর্তী জল ও স্থলপথে টহল জোরদার করেছে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর সৈয়দ ইশতিয়াক মুর্শেদ বলেন, সীমান্ত নিরাপত্তায় কঠোর অবস্থানে বাংলাদেশ। কাউকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না।