অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দাবিদাওয়ার যেন শেষ নেই। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে জানানো হচ্ছে নানা ধরনের দাবি। এ নিয়ে প্রশাসনের কেন্দ্রবিন্দু বাংলাদেশ সচিবালয়ের ভিতর ও বাইরে ঘেরাও, অবস্থানসহ বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। দাবি আদায়ে পাঁচটি সংগঠনের কর্মসূচি ছিল গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে। এতে ওইসব সড়কে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। যানজটে ভোগান্তিতে পড়েন নগরবাসী।


সচিবালয়ে চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যরা : ২০০৯ সালে ঢাকার পিলখানায় বিদ্রোহের অভিযোগে মামলার আসামি হওয়া কারাবন্দি সদস্যদের মুক্তি এবং চাকরি ফেরতসহ ছয় দফা দাবি নিয়ে স্বরাষ্ট্র সচিবের কাছে স্মারকলিপি জমা দেয় চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের একটি প্রতিনিধিদল। গতকাল বিকালে তারা সচিবালয় প্রবেশ করেন। প্রতিনিধিদলে চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যরা হলেন- ফখরুদ্দিন আহমেদ, মো. দেলোয়ার, মাহবুব, মো. মনির ও রোকসাল আল প্রধান রিয়াল। এ ছাড়াও তাদের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মাহিন সরকার ছিলেন। নিজেদের দাবি আদায়ে আন্দোলন করা বিডিআরের চাকরিচ্যুত সদস্যরা গতকাল দুপুরের দিকে শিক্ষা ভবনের সামনে আসেন। সেখানে বিপুল পরিমাণ পুলিশের বাধার মুখে পড়েন তারা। এরপরও তারা সামনে যেতে চাইলে পুলিশ জলকামান ব্যবহার করে। পরে জলকামান পেরিয়ে সচিবালয় এলাকায় আবদুল গণি রোডে খাদ্য ভবনের সামনে অবস্থান নেন তারা। সেখানে বসে বিভিন্ন স্লোগান দেন। দুপুরের দিকে সচিবালয়ের প্রবেশ গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। সচিবালয়ের ভিতরে-বাইরে ব্যাপক সংখ্যক সেনাসদস্য দেখা যায়।


কর্মবিরতিতে নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালের চিকিৎসকরা : চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের হামলার অভিযোগে ঢাকার নিউরোসায়েন্স ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চিকিৎসকরা কর্মবিরতিতে গেছেন। হাসপাতালের কর্মচারী ও আউটসোর্সিং কর্মীদের দিয়ে চিকিৎসকদের ওপর হামলার ঘটনায় পরিচালক ও যুগ্ম পরিচালকের পদত্যাগের দাবিতে কর্মবিরতির ডাক দেন তারা। চিকিৎসকরা কাজে যোগ না দেওয়ায় গতকাল সকাল ১০টা থেকে এ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ এবং আউটডোর ছাড়া বাকি চিকিৎসাসেবা বন্ধ রয়েছে। আন্দোলনরত চিকিৎসকরা বলেন, নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালে কর্মরত স্বাচিপপন্থি চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. গুরুদাস মন্ডলকে প্রায় ৪ মাসে আগে পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বদলি করা হয়। সম্প্রতি তাঁকে আবার নিউরোসায়েন্সেস হাসপাতালে ফিরিয়ে আনা হলে বৈষম্যবিরোধী চিকিৎসকদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে গতকাল চিকিৎসকরা হাসপাতালের পরিচালক কাজী দ্বীন মোহাম্মদের কক্ষে যান। সেখানে বিষয়টি নিয়ে কিছুটা হট্টগোল হয়। পরে চিকিৎসকরা বের হয়ে ৪০২ নম্বর কক্ষে এসে বৈঠক করার সময় হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী এবং আউটসোর্সিংয়ের কিছু কর্মচারী তাদের ওপর হামলা করে বলে অভিযোগ চিকিৎসকদের।


আন্দোলনে প্রাথমিকের চাকরিপ্রার্থীরা : চাকরিতে অবিলম্বে যোগদান দাবিতে এবার ‘লংমার্চ টু ঢাকা’ ও ‘জাস্টিস ফর টিচার’ কর্মসূচি দিয়েছেন প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষক পদে যোগদানের অপেক্ষায় থাকা চাকরিপ্রার্থীরা। চাকরিতে যোগদান নিশ্চিত করতেই হবে- এমন এক দফা ঘোষণা করেছেন তারা। আজ সকাল থেকে শাহবাগে এ কর্মসূচি শুরু হবে তাদের। গতকাল সন্ধ্যায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে বিক্ষোভ শেষে এ কর্মসূচি দেন আন্দোলনকারীরা। গত বৃহস্পতিবার থেকে এই চাকরিপ্রার্থীরা টানা আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে আসছেন। গতকাল তারা শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে সকালে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। পরে দুপুরে মিরপুরে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভ চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। সেখানে ‘লংমার্চ টু ঢাকা’ ও ‘জাস্টিস ফর টিচার’ কর্মসূচি ঘোষণা করে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে অবস্থান কর্মসূচিতে ফিরে আসেন তারা। আন্দোলনকারীরা বলেন, যত দিন পর্যন্ত আমাদের দাবি মানা না হবে আমরা রাজপথে থাকব এবং আমাদের কর্মসূচি চলমান থাকবে। হাই কোর্টের সিদ্ধান্ত বাতিল করা না হলে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানানো হয়।


জাতীয়করণের দাবিতে অবস্থান এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের : এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণের দাবিতে গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা। বেসরকারি শিক্ষকদের বেশ কয়েকটি সংগঠন এতে অংশ নেয়। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন শিক্ষক-কর্মচারীরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করবেন বলেও ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোট ঘোষিত এ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে আন্দোলনকারীরা সরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীদের মতো বাড়িভাড়া, মেডিকেল ভাতা ও উৎসব ভাতা দাবি করেন। জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের সদস্যসচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজী বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে দাবি মেনে নেওয়ার সুস্পষ্ট ঘোষণা ছাড়া প্রেস ক্লাব ছেড়ে যাবেন না এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা। তিনি সরকারকে দাবি মেনে নেওয়ার আহ্বান জানান। শিক্ষকদের এ কর্মসূচিতে আয়োজক জোটের যুগ্ম আহ্বায়ক প্রকৌশলী আবুল বাশার, শাহ আলম, মো. জহিরুল ইসলাম প্রমুখ অংশ নেন।


মাউশি-নায়েম ডিজি প্রত্যাহার না হলে বৃহৎ আন্দোলনের হুঁশিয়ারি : মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) অধ্যাপক ড. এহতেসাম উল হক ও জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমির (নায়েম) মহাপরিচালক প্রফেসর ড. মো: জুলফিকার হায়দারকে প্রত্যাহার দাবিতে দফায় দফায় কর্মসূচি আর আলটিমেটামের পর বৃহৎ আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শিক্ষকরা। বিএনপিপন্থি শিক্ষক সংগঠন বাংলাদেশ শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের ব্যানারে বিক্ষোভের পর গতকাল মাউশির সামনে এ হুঁশিয়ারি দেন তারা। আজকের মধ্যে এই দুই ডিজিকে সরিয়ে না দিলে রবিবার থেকে বড় আন্দোলনের ডাক দেবেন তারা।


গতকালের কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্য জোটের চেয়ারম্যান ও বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের বর্তমান সচিব শিক্ষার মানোন্নয়নে কোনো উদ্যোগ না নিয়ে বিব্রতকর ও বিতর্কিত বিভিন্ন কর্মকান্ডে লিপ্ত। তাঁর কারণে এখনো ছাত্রছাত্রীরা স্কুলে নতুন বই পায়নি।