বৃহত্তর চট্টগ্রামের অন্যতম সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে মোট শয্যা রয়েছে ২ হাজার ২২২টি। গড়ে রোগী ভর্তি থাকে ৩ হাজার থেকে ৩৫০০ পর্যন্ত। ওয়ার্ডের ফ্লোর ও বারান্দায় থেকে স্পর্শকাতর রোগীদের চিকিৎসা নিতে হয়। আছে জনবল ও চিকিৎসা উপকরণের চরম সংকট। অন্যদিকে, চট্টগ্রামে সরকারি পর্যায়ে দ্বিতীয় প্রধান সেবাকেন্দ্র জেনারেল হাসপাতাল। অবকাঠামো থাকলেও জনবল এবং চিকিৎসা উপকরণ সংকটে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা। ২০৫ শয্যার এই হাসপাতালে গড়ে রোগী ভর্তি থাকেন ১৫০ থেকে ১৮০ জন। এভাবে চট্টগ্রামের স্বাস্থ্যসেবায় চলছে করুণ অবস্থা। ভঙ্গুর স্বাস্থ্য খাত চলছে খুঁড়িয়ে। সরকারি এ দুই হাসপাতালে বছরজুড়েই সঙ্গী জনবল ও চিকিৎসা যন্ত্রপাতির সংকট। সংকট মাড়িয়েই নিরুপায় হয়ে গরিব-অসহায় ও খেটে খাওয়া মানুষ চিকিৎসা নিচ্ছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চমেক হাসপাতালে দুটি এনজিওগ্রাম মেশিন থাকলেও একটি দীর্ঘ দিন ধরে নষ্ট। দুটি এমআরআই মেশিন থাকলেও একটি নষ্ট। ফলে ব্যয়বহুল এ দুটি রোগ নির্ণয়ের জন্য রোগীদের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে যেতে হয়। চিকিৎসা উপকরণ সংকট আছে ক্যান্সার বিভাগে। বার্ন ইউনিটে শয্যা থাকলেও আইসিইউর অভাবে সংকটাপন্ন রোগী নিয়ে ঢাকায় যেতে হয়। আইসিইউ বিভাগে শয্যা থাকলেও জনবল সংকট চরমে। সার্জারি ওয়ার্ডে অপারেশন থিয়েটার এবং এনেসথেসিয়ালিস্টের অভাবে মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে হয় শিডিউলের জন্য। কিডনি বিভাগে ডায়ালাইসিসের জন্যও অপেক্ষা করতে হয়। অন্যদিকে, জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা উপকরণ সংকট চরমে। নেই এনজিওগ্রাম মেশিন, এক্সরে মেশিন কখনো সচল-কখনো অচল। রাতের বেলায় চিকিৎসা মিলে না জরুরি বিভাগে।
চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য খাতের এমন বেহাল দশা চলাকালীন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণের পর স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম আজ চমেক হাসপাতাল এবং জেনারেল হাসপাতাল পরিদর্শন করবেন।
জনস্বাস্থ্য অধিকার রক্ষা আন্দোলনের সদস্য সচিব ডা. সুশান্ত বড়ুয়া বলেন, চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য খাতের তেমন উন্নয়ন হয়নি। তাই অনতিবিলম্বে চট্টগ্রাম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় পুরোপুরি চালু করা, চমেক হাসপাতালে জনবল নিয়োগ, অচল যন্ত্রপাতি দ্রুত সচল, এমআরআই ও এনজিওগ্রাম মেশিনের সংখ্যা বাড়ানো, প্যাথলজিক্যাল সেবার পরিধি বাড়ানো, ওয়ার্ডের অস্বাস্থ্যকর, দুর্গন্ধময় টয়লেটগুলো ব্যবহার উপযোগী করা এবং জেনারেল হাসপাতালকে কেন্দ্র করে একটি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করা আমাদের দাবি। তিনি বলেন, ডেঙ্গু এখন আমাদের বড় একটি সমস্যা। এটিকে এখন আর বর্ষা মৌসুমের রোগ বলা যাচ্ছে না। তাই ডেঙ্গু প্রতিরোধে বছরজুড়ে কর্মসূচি চলমান রাখতে হবে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে মশক নিধন কর্মসূচি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রশাসনের অধীনে নিয়ে আসা এখন সময়ের দাবি। চট্টগ্রাম ডেভেলপমেন্ট ফোরামের সমন্বয়ক খোরশেদ আলম বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার কোনো উন্নতি ঘটেনি। অপরিকল্পিতভাবে অনেক উন্নয়ন হলেও সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার চিকিৎসা পাওয়ার ক্ষেত্রে চরম দুর্নীতি ছাড়া কোনো উন্নতি হয়নি। এ ব্যাপারে আমরা সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব নিয়ে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে স্মারকলিপি দেব। চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষের চরম দুর্ভোগের কথা তুলে ধরব।