নারায়ণগঞ্জের ব্যবসায়ী মো. জসিম উদ্দিন মাসুম (৬২) হত্যাকান্ডের মূলহোতা রুমা আক্তারকে আটক করেছে পুলিশ। এ সময় হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত চাপাতি, হ্যাকস ব্লেড এবং নিহত মাসুমের পরিধেয় সাফারি স্যুট উদ্ধার করা হয়েছে। অভিযুক্ত রুমা আক্তার ময়মনসিংহের গৌরীপুরের তাতরাকান্দা এলাকার নজর আলীর মেয়ে। গতকাল বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে নিজ সুপারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার। সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রুমা হত্যাকান্ডের কথা স্বীকার করেছেন। তার দেওয়া তথ্যমতে মাসুমের লাশের অন্যান্য অংশ খুঁজে পাওয়া গেছে। পুলিশ সুপার জানান, রুমার সঙ্গে শিল্পপতি মাসুমের অবৈধ প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এই প্রেমের সম্পর্ককে কেন্দ্র করে গত ১০ নভেম্বর শেওড়াপাড়া রুমার ভাড়া বাসায় মাসুমকে প্রথমে দুধের সঙ্গে চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে হত্যা করা হয়। এরপর তার লাশ চাপাতি ও হ্যাকস ব্লেড দিয়ে খন্ড খন্ড করে পাঠাওয়ের গাড়িযোগে বিভিন্ন স্থানে ফেলে দেন রুমা। ঘটনায় জড়িত অন্যদের ধরতে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছে পুলিশ। তিনি বলেন, লাশ উদ্ধার হওয়ার পর আমাদের পুলিশ তাৎক্ষণিক এর তদন্ত শুরু করে। গুলশান থানার একটি জিডির সূত্র ধরে আমরা এই ভুক্তভোগীর পরিচয় জানতে পারি। তার সঙ্গে রুমা নামের একটি মহিলার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সেই সম্পর্কের জের ধরেই এই হত্যাকান্ড ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। নিহত মাসুমের পরিবার ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ১০ নভেম্বর বিকালে জসিম গাড়িতে করে বাসা থেকে বের হয়ে গুলশান যান। এরপর ব্যক্তিগত গাড়িচালককে ছেড়ে দেন। চালককে জানিয়েছিলেন, অন্য গাড়িতে নারায়ণগঞ্জের কারখানায় যাবেন। তবে রাতে বাসায় না ফেরায় ও মোবাইল বন্ধ থাকায় পরদিন গুলশান থানায় তার বড় ছেলে ওবায়দুল ইসলাম শিবু জিডি করেন। জিডির তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার এসআই মো. রাশেদ বলেন, শিল্পপতি জসিম উদ্দিনের সর্বশেষ লোকেশন কাফরুলে দেখা গিয়েছিল। এর পর আর তাঁর কোনো খোঁজখবর পাওয়া যাচ্ছিল না। নিহতের বড় ছেলে বলেন, দাড়ি, নখ ও বাঁ পায়ের কিছু চিহ্ন দেখে বাবার লাশ শনাক্ত করি। গত ১০ নভেম্বর বিকাল থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। এ ঘটনায় গুলশান থানায় একটি জিডিও করেছি। সেরা করদাতা হিসেবে আমার বাবা একাধিকবার কর বাহাদুর পুরস্কার পেয়েছেন। তিনি একজন শিল্পপতি। চাঁদ ডায়িং ফ্যাক্টরিসহ আমাদের অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বাবার সঙ্গে কারও শত্রুতা রয়েছে বলে জানা নেই। রূপগঞ্জ থানার ওসি লিয়াকত আলী বলেন, ওই ব্যক্তি অন্তত তিন দিন আগে মারা গেছেন বলে ধারণা করছি। হত্যার পর তাঁর দেহের বিভিন্ন অংশ কেটে টুকরা করে পলিথিন ব্যাগে ভরে লেকে ফেলে দেওয়া হয়। তাঁর শরীরের দুটি অংশ এখনো পাওয়া যায়নি। আমরা যথাসম্ভব খুঁজেও পাইনি। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান তিনি। প্রসঙ্গত, গত বুধবার পূর্বাচল ৫ নম্বর সেক্টরের একটি লেকের পাড় থেকে কালো পলিথিনের ব্যাগের ভিতরে শিল্পপতি জসিম উদ্দিন মাসুমের বিচ্ছিন্ন মাথা, দুটি হাত, বিচ্ছিন্ন দুটি পা, বুকের অংশ এবং ধারালো অস্ত্র দ্বারা বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ভুঁড়ি, ফেপসা ও কলিজা একটি সাদা পলিথিনের ভিতর মোড়ানো অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি ফতুল্লার চাঁদ ডায়িংয়ের মালিক।