রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোর মোড়ে মোড়ে প্রাইভেট কার, বাস, রিকশাসহ অন্য যানবাহনগুলো সুশৃঙ্খলভাবে চলছে। লাইন মেনে, কোনো ওভারটেকিং ছাড়াই চালকরা গাড়ি চালাচ্ছেন। সড়কে নেই যানজট। বাস চালকরা আগের মতো যেখানে সেখানে গাড়ি দাঁড় করিয়ে যাত্রী তুলছেন না। মোটরসাইকেল চালকরাও হেলমেট পরে ট্রাফিক নিয়ম মেনে সড়কে চলাচল করছেন। অপ্রয়োজনে কেউ আগের মতো হর্ন বাজাচ্ছেন না। এমন সুশৃঙ্খলভাবে নগরবাসীকে ট্রাফিক নিয়ম মেনে চলাচল করতে আগে দেখা যায়নি। অথচ ঢাকার প্রধান সড়কগুলোতে এখন ট্রাফিক পুলিশ নেই। তাদের অনুপস্থিতিতে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাই ঢাকায় ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালন করছে। আর তাদের সহযোগিতা করছে নগরবাসীও। তবে এই দৃশ্য শুধু ঢাকার না, ঢাকার বাইরের বিভাগীয় শহর থেকে শুরু করে জেলা শহরগুলোতেও সড়কে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে সরব থাকতে দেখা যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের এ কাজের প্রশংসা করেছেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। গতকাল বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি শিক্ষার্থীদের ভূয়সী প্রশংসা করেন। গতকাল মিরপুর-১২ নম্বর এলাকায় ১০ জন শিক্ষার্থীর একটি দলকে দেখা যায় সড়কের যান নিয়ন্ত্রণ করতে। সড়কের মাঝ বরাবর দাঁড়িয়ে লাঠি হাতে তারা গাড়ি চালকদের লেন মেনে যান চালানোর জন্য নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছিল। তাদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা হলে শিক্ষার্থীদের একজন মো. মাহমুদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা সবাই মিলে সড়কে যান নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পালন করছি। আমাদের সঙ্গে স্কাউটের শিক্ষার্থীরাও যোগ দিয়েছে। যতদিন পর্যন্ত ট্রাফিক পুলিশ দায়িত্ব পালন শুরু না করবে ততদিন পর্যন্ত আমরা এই দায়িত্ব পালন করব।’ এই শিক্ষার্থী আরও জানায়, তারা রাত ১০টা পর্যন্ত যান চলাচল নিয়ন্ত্রণের কাজ করবে। এ সময় কয়েকজন শিক্ষার্থীকে ‘ট্রাফিক আইন মেনে চলুন’ ‘হেলমেট ব্যবহার করুন’ লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
শুধু যান চলাচল নিয়ন্ত্রণই নয়, এর পাশাপাশি সড়ক পরিষ্কারেও শিক্ষার্থীদের ভূমিকা ছিল চোখে পড়ার মতো। মিরপুর ১২ নম্বরে, রাস্তার পাশের ড্রেনে জমে থাকা ময়লাও তারা পরিষ্কার করছিলেন। আর শিক্ষার্থীদের এই কাজের প্রশংসা করেন সাধারণ মানুষ। আশপাশের বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট থেকে শিক্ষার্থীদের কাজের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে তাদের খাবার, পানি এবং জুস দেওয়া হয়।
কালশী সড়কে গতকাল মেয়ে শিক্ষার্থীদের ঝাড়ু ও বেলচা হাতে জমে থাকা ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করতে দেখা যায়। তাদের একজন মারিয়া তাবাসসুম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সড়কে যান চলাচলের পাশাপাশি আন্দোলন চলাকালীন সময়ে সড়কের ওপর পড়ে থাকা ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করছি। মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে সড়কে চলাচল করতে পারেন।’ কালশী এলাকার বাসিন্দা আবদুল ওয়াহাব মিয়া বলেন, ‘যে শিক্ষার্থীরা কয়দিন আগে আন্দোলন করে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারকে গদি থেকে নামিয়েছে, আজ সেই সাধারণ শিক্ষার্থীরাও সড়কে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করছে। রাস্তাঘাট পরিষ্কার করছে। আমি তাদের এই কাজের প্রশংসা করর্ছি।’ মিরপুর ইসিবি চত্বর মোড়েও শিক্ষার্থীদের যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে বেশ সক্রিয় দেখা যায়। সড়কে যেসব আরোহী হেলমেট ছাড়াই মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলেন শিক্ষার্থীরা তাদের হেলমেট পরার জন্য বলছিলেন। কয়েকজন শিক্ষার্থী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যারা হেলমেট ছাড়া মোটরসাইকেল চালাচ্ছেন তাদের আমরা হেলমেট পরার আহ্বান জানাচ্ছি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই যাত্রীরা আমাদের সহযোগিতা করছেন। কেউ প্রশংসা করছেন। অনেকে আমাদের জন্য খাবার পানি, বিস্কুট দিয়ে যাচ্ছেন।
বগুড়া : পুলিশ বিভাগ কর্মবিরতি ঘোষণা করায় বগুড়া সদর থানা ও ফাঁড়ি ফাঁকা হয়ে আছে। এ অবস্থায় শহরে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালন করছেন সাধারণ ছাত্ররা। এ ছাড়া শহরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ময়লা আবর্জনাও পরিষ্কার ও বৃক্ষরোপণ করছেন তারা।
শহরের সাতমাথায় ও আশপাশের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালন করছেন প্রায় অর্ধশত ছাত্র। তারা শহরের সাতমাথা, বড়গোলা, ইয়াকুবিয়া মোড়, দত্তবাড়ি, নবাববাড়ি সড়কসহ গুরুত্বপূর্ণ সড়কে দাঁড়িয়ে শহরের যানজট কমাতে ও শৃঙ্খলভাবে যানবাহন চলাচলে কাজ করছেন। গতকাল সকাল থেকে শহরের দোকানপাট, অফিস-আদালত খুলেছে। রাস্তায় বেরিয়েছে সব ধরনের যানবাহন। শহরে আসা মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে ও যানজট নিয়ন্ত্রণে ছাত্রদের দায়িত্ব নিতে দেখা গেছে। সাতমাথায় বেশ কয়েকজন ছাত্র নিজ উদ্যোগে যানজট নিরসনে দায়িত্ব পালন করেছেন। ফলে যানজট বা সড়কে বিশৃঙ্খলা চোখে পড়েনি। বিভিন্ন যানবাহনের চালকরাও স্বেচ্ছাসেবী ছাত্রদের নির্দেশনা মেনে সড়কে গাড়ি চালাচ্ছিলেন।
চুয়াডাঙ্গা : চুয়াডাঙ্গায় মন্দিরে মন্দিরে পাহারা বসিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতা-কর্মীরা। মঙ্গলবার রাত থেকে তারা এ পাহারার কাজ শুরু করেন। এর আগে বিকাল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত শহরের শহীদ হাসান চত্বরে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করেন তারা।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সেক্রেটারি তুষার ইমরান সরকার জানান, প্রথম দিন তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে রাত ১০টা থেকে ১টা পর্যন্ত শহরের বড় বাজার এলাকার দুটি মন্দিরে তারা পাহারা দেন। আরও বেশি সংখ্যক মন্দিরে অধিক সময় পাহারার কাজ করা হবে। তিনি বলেন, প্রথম দিন ১২ জনের দল নিয়ে তারা দুটি মন্দিরে পাহারা দেন। এ ছাড়া একই দলের সদস্যরা মঙ্গলবার বিকাল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালন করেন।
দিনাজপুর : দেশে চলমান অস্থিরতায় দিনাজপুর শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ ও পরিচ্ছন্নতা অভিযানে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা মাঠে নেমেছেন। যানজট নিরসনে দিনাজপুর শহরের বিভিন্ন স্থানে এ কাজে নামেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীরা।
দেখা গেছে, আন্দোলন চলাকালে সড়কে পড়ে থাকা আবর্জনা দলবেঁধে পরিষ্কার করছেন শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি যেসব সড়কে ট্রাফিক পুলিশ নেই, সেখানে সুশৃঙ্খলভাবে যানবাহন চলাচলে দায়িত্ব পালন করছেন। যানবাহন চালকদের ট্রাফিক আইন মেনে চলার অনুরোধ করতে দেখা যায় তাদের। তবে শহরের কয়েক জায়গায় ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনসার বাহিনীর সদস্যদের দেখা যায়।
হবিগঞ্জ : দেশে চলমান পরিস্থির কারণে শিক্ষার্থীরা মাঠে নেমেছেন ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করতে। গতকাল দুপুরে হবিগঞ্জ শহর ঘুরে এমন চিত্রেরই দেখা মিলেছে। শহরের সবুজবাগ, সিনেমাহল রোড, টাউন হল রোডসহ বেশ কিছু স্থানে দেখা গেছে, সড়কের যেসব স্থানে যত্রতত্র ময়লার স্তূপ জমেছে সেসব ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করছেন শিক্ষার্থীরা। সড়ক ও সড়কের পাশ থেকে ময়লা সরিয়ে রাখছেন নির্দিষ্ট স্থানে। এ সময় যত্রতত্র ময়লা না ফেলতে সাধারণ মানুষকে অনুরোধও করেন তারা। এ ছাড়াও শহরের বিভিন্ন স্থাপনার দেয়াল লিখনও মুছতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের।
ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহ শহরের বিভিন্ন এলাকায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি পালন করছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। গতকাল সকালে শহরের পায়রা চত্বর, প্রেরণা একাত্তর চত্বর, হামদহ, আরাপপুরসহ কয়েকটি এলাকায় সড়ক পরিষ্কার করতে দেখা যায় তাদের।
কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামে রাস্তাঘাট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নের দায়িত্বে ঝাড়ু হাতে নিয়ে পরিচ্ছন্নতার কাজে এবং সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করছেন আন্দোলনকারী ও সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা। এসঙ্গে জেলার বিভিন্ন সড়কের যান চলাচল স্বাভাবিক করতে শৃঙ্খলার দায়িত্বে তাদের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন জেলার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আনসার সদস্যরা। সকাল ৯টা থেকে দুপুর পর্যন্ত অনেক সাধারণ শিক্ষার্থী জেলা শহরের শাপলা চত্বর এলাকা, দাদা মোড় এলাকা ও জেলা পরিষদের সামনেসহ বিভিন্ন রাস্তা ও তার পাশে সড়কের নানা আবর্জনাসহ ময়লা ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করেন এসব শিক্ষার্থী।
লক্ষ্মীপুর : সকাল থেকেই সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে মাঠে শিক্ষার্থীরা কাজ করতে দেখা গেছে। এদিকে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও লুটপাট এড়াতে তৎপরতায় দেখা গেছে দায়িত্বরত সেনাবাহিনী ও এলাকাবাসীকে। অন্যদিকে জেলার রামগঞ্জে ভাঙচুর ও লুটপাট ও পৃথক ঘটনায় মঙ্গলবার (৬ আগস্ট রাত পর্যন্ত) তিনজন নিহতের খবর পাওয়া গেছে। গত দুই দিনে দুষ্কৃতকারীরা রায়পুর ও রামগঞ্জ থানা, উপজেলা পরিষদ কার্যালয় এবং আওয়ামী লীগের আট নেতার বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
মানিকগঞ্জ : শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মীরা বিভিন্ন স্থাপনায় অবস্থানসহ রাস্তায় ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করছেন। ঢাকা আরিচা মহাসড়কসহ বিভিন্ন এলাকায় তারা এ দায়িত্ব পালন করছেন। অপরদিকে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসের শুরা সদস্য মাওলানা দেলোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে মানুষের জান-মাল রক্ষায় মাঠে নেমেছেন নেতা-কর্মীরা।
সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জের সরকারি স্থাপনার নিরাপত্তায় ও শহরের সড়কে যান চলাচলের শৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন শুরু করেছে গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী ও রোভার স্কাউটের সদস্য শিক্ষার্থীরা। গতকাল সকাল থেকে এ দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায় তাদের। সরকারি নির্দেশনায় জেলা সদরের পাশাপাশি বিভিন্ন উপজেলা সদরের পৌর এলাকাগুলোর রাস্তায় রিকশা, অটোরিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ হালকা যানবাহন চলাচলের শৃঙ্খলা রক্ষায় মোড়ে মোড়ে দায়িত্ব পালন করছে গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী। তাদের সঙ্গে একই দায়িত্ব পালন করছে রোভার স্কাউটের সদস্য শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে গত কয়েক দিনের সংঘর্ষে শহরের বিভিন্ন স্থানে জমে থাকা ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কারের কাজও করছেন শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে কালের কণ্ঠ শুভ সংঘের উদ্যোগে শুভ সংঘের সদস্যরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্ম হয়ে শহরের রাস্তা ও কোর্ট ভবন পরিষ্কার ও পরিচ্ছন্নতা কাজ করেছেন।
টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইল শহরে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার সকাল থেকে শহরের বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে যানজট নিরসনের জন্য কাজ করতে দেখা গেছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের। সড়কে অবস্থান নিয়ে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের কারও হাতে ছিল লাঠি, কারও মুখে বাঁশি। ট্রাফিক পুলিশের মতো ইশারা-ইঙ্গিতের মাধ্যমে গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করেছেন তারা।
আমতলী (বরগুনা) : ইউএনও অফিস ও আমতলী থানাসহ সব সরকারি স্থাপনা পাহারা এবং ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ দলের নেতা-কর্মীরা। শিক্ষার্থীরা উপজেলা সড়কের ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করছেন। আমতলী উপজেলা শহর ঘুরে দেখা গেছে, ইউএনও অফিস, থানা ও সব সরকারি স্থাপনা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নেতা-কর্মীরা পাহারা দিচ্ছেন। আমতলী একে স্কুল চৌরাস্তা, সাকিব প্লাজা, বাঁধঘাট চৌরাস্তাসহ বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে তারা দাঁড়িয়ে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করছেন। নিয়ম শৃঙ্খলার মেনেই যানবাহন চলাচল করছে। কোনো জ্যাম হচ্ছে না। অপর দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আমতলী উপজেলার শিক্ষার্থীরা উপজেলা সড়কের রাস্তার ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করছেন।
কিশোরগঞ্জ : কিশোরগঞ্জ শহরের রাস্তায় এখন আর আগের মতো যানজট নেই। নিরীহ অটোচালকদের ওপর নেই কোনো জুলুম। পুরো ট্রাফিক ব্যবস্থা দক্ষ হাতে নিয়ন্ত্রণ করছে ছাত্ররা। তাদেরকে সহযোগিতা করছে স্কাউট, গার্লস গাইড ও আনসার সদস্যরা। জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, ইসলামী ছাত্র ও যুব আন্দোলন, নিরাপদ সড়ক চাইসহ (নিসচা) বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও সাধারণ ছাত্রদের সঙ্গে একযোগে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। ছাত্রদেরকে পানি সরবরাহ করছে এপেক্স ক্লাবসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন।
বরিশাল : বরিশাল নগরের যানবাহনের চলাচলে শৃঙ্খলা রক্ষায়সহ সড়ক পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতায় নিয়োজিত রয়েছেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। গতকাল সকাল থেকেই নগরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে অবস্থান নিয়ে এ কাজ করে শিক্ষার্থীরা। নগরের বাসিন্দা আরিফ আহমেদ বলেন, শিক্ষার্থীরা খুবই চমৎকারভাবে দায়িত্ব পালন করছে। যানবাহন চলাচলে একটি শৃঙ্খলা আনার চেষ্টা করছে। সেখানে সিনিয়র-জুনিয়র কিংবা স্বজনদের কোনো ছাড় দিচ্ছে না। সবাইকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে স্বোচ্ছার হওয়ার আহ্বান করছে। নগরের সদর রোড কাকলী হলের মোড় এলাকায় দায়িত্বরত শিক্ষার্থী হাসিব ও পারভেজ বলেন, তারা দায়িত্ব পালন করে ভালো লাগছে। যা ভবিষ্যৎ জীবনে কাজে দেবে। আমরা এরপর থেকে শৃঙ্খলা রেখে চলাচল করব।
শিক্ষার্থীরা ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব ছাড়াও নগরের বিভিন্ন সড়কের ওপর ফেলে রাখা ময়লা আবর্জনা, ইট ও আন্দোলনের সময় অগ্নিসংযোগের পর পড়ে থাকা উচ্ছিষ্টাংশ পরিষ্কার করেছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া : হামলা ও অগ্নিসংযোগে ধ্বংসস্তূূপে পরিণত হওয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানায় পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চালিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল সকাল থেকে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, রেড ক্রিসন্টে ও মাদরাসার ছাত্ররা এই পরিচ্ছন্নতা অভিযানে অংশ নেন। এ সময় তারা থানার বিভিন্ন ভবনের পুড়ে যাওয়া ও ভাঙচুর করা ধ্বংসাবশেষ পরিষ্কার করেন। শিক্ষার্থীরা জানান, শতাধিক শিক্ষার্থী শহর পরিচ্ছন্নতা অভিযানে অংশ নিয়েছেন। রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষা করার দায়িত্ব সবার। শিক্ষার্থীরা কোনো প্রতিষ্ঠানে হামলা করেনি।
জামালপুর : দুপুরে শহরের ফৌজদারি মোড় এলাকা থেকে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম শুরু করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। প্রথমে শহরের ফৌজদারি মোড় এলাকায় একত্রিত হয় শিক্ষার্থীরা। পরে কয়কটি দলে বিভক্ত হয়ে শহরের বিভিন্ন জায়গায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালনা করেন তারা। এ কাজে বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, স্কুলের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরাও অংশগ্রহণ করেন। শিক্ষার্থীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, ফৌজদারি মোড়, দয়াময়ী মোড়, সকাল বাজার, গেটপাড়, বাইপাস মোড়, পাঁচরাস্তা মোড় ও সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজসহ বিভিন্ন এলাকায় পরিষ্কার করেন।
পঞ্চগড় : পঞ্চগড়ে যে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল মঙ্গলবার সকাল থেকেই তা স্বাভাবিক হতে শুরু করে। গতকাল সকাল থেকেই শহরে লোকসমাগম বাড়তে থাকে। বাড়তে থাকে যানবাহন, মানুষের ব্যস্ততা। সব ধরনের দোকান পাট অফিস আদালতসহ ব্যাংক বিমা প্রতিষ্ঠানে চলছে স্বাভাবিক কার্য়ক্রম। ব্যস্ততম নগরীতে পরিণত হয়েছে পঞ্চগড় জেলা শহর। ফিরে এসেছে পুরনো চেহারা।
দুপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা শহরের সদর থানা চত্বর থেকে পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরু করেন। পরে তারা জেলা পরিষদ, শেরেবাংলা পার্ক এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি করেন। এ সময় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তিন শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন।
নীলফামারী : গতকাল দুপুরে শহরের বিভিন্ন স্থানে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা সেই ধ্বংসস্তূপগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা হাতে বস্তা, ঝাড়ু ও বেলচা নিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজে নেমে পড়েন। শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা আমাদের শহরকে পরিচ্ছন্ন করতে নেমেছি। যদি কোথাও কেউ আবার ভাঙচুর বা ধ্বংসযজ্ঞের চেষ্টা করে তাহলে তাদের শক্ত হাতে দমন করা হবে।
গাজীপুর : ট্রাফিক পুলিশ না থাকায় সড়কে যানবাহনের শৃঙ্খলা রক্ষায় ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করছেন বিভিন্ন স্কুল-কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সড়কে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে সাধারণ শিক্ষার্থীর সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন ইসলামী যুব আন্দোলন গাজীপুর জেলা শাখার নেতা-কর্মীরাও। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, মহাসড়কে আলাদা আলাদা দলে ভাগ হয়ে তাদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। জেলা শহরের রাজবাড়ী রোড, চান্দনা চৌরাস্তা, কোনাবাড়ী, জয়দেবপুরের শিববাড়ী মোড়সহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ও ইসলামী যুব আন্দোলন গাজীপুর জেলা শাখার নেতা-কর্মীরা রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করছেন।