প্রিয় নবী (সা.) প্রায় সময় সাহাবায়ে কেরামকে নসিহত করতেন। মূল্যবান উপদেশ দান করতেন। এসব উপদেশমালা প্রত্যেক মানুষের জীবনের জন্য খুবই জরুরি। যে কেউ প্রিয় নবীর এসব উপদেশ ও নসিহত মনে রাখবে, তা তার জন্য জীবন পথের পাথেয় হয়ে থাকবে। হজরত আমর ইবনে মায়মুন (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রসুল (সা.) এক ব্যক্তিকে উপদেশস্বরূপ বললেন, পাঁচটি বস্তু আসার আগে পাঁচটি কাজ করাকে বড় নিয়ামত মনে করবে। যথা- ১. তোমার বার্ধক্য আসার আগে যৌবনকে ২. রোগে আক্রান্ত হওয়ার আগে সুস্থতাকে ৩. অভাবগ্রস্ত হওয়ার আগে অভাবমুক্ত থাকা ৪. ব্যস্ততা শুরু হওয়ার আগে অবসর এবং অবকাশকে আর ৫. মৃত্যু আসার আগে জীবন বা আয়ুকে (তিরমিযী)। অর্থাৎ এ পাঁচটি বিষয় সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে। যৌবনকে মূলায়ন করতে হবে। এই বয়সে ইবাদত-বন্দেগি বেশি করতে হবে। সুস্থ অবস্থাকে আল্লাহর নেয়ামত মনে করতে হবে। অসুস্থ হওয়ার আগেই নিজের জানমাল, সময় আল্লাহর ইবাদতে ব্যয় করতে হবে। সচ্ছল অবস্থায় নিজের টাকাপয়সা ভালো কাজে ব্যয় করতে হবে। কারণ এমনও হতে পারে যে আপনি চাইবেন নিজের সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করতে, কিন্তু তখন হয়তো সামর্থ্য থাকবে না। তাই সামর্থ্যবান থাকা অবস্থায় প্রত্যেকে সাধ্যানুযায়ী ভালো ভালো কাজে সম্পদ ও সম্পত্তি ব্যয় করতে হবে। অনুরূপভাবে অবসর সময়কে কাজে লাগাতে হবে। এমন একটা সময় চলে আসতে পারে, যখন আপনি হয়তো চাইবেন ভালো কাজে সময় ব্যয় করতে। কিন্তু তখন ব্যস্ততা অনেক বেড়ে যাবে। চাইলেও তখন আল্লাহর রাস্তায় সময় ব্যয় করতে পারবেন না। তাই প্রিয় নবী (সা.) অবসর সময়কে কাজে লাগানোর প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। এরপর রসুল (সা.) মৃত্যু আসার আগে নিজের জীবনকে এবং জীবনের সময়কে ভালো ভালো কাজে ব্যয় করার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। কারণ যে আজ মারা গেল, সে জানতই না যে আজ তার হায়াত শেষ। পৃথিবী থেকে আজই তাকে বিদায় নিতে হবে। যদি সে জানত, তাহলে হয়তো আল্লাহর কাছে তওবা করত। নিজের ভুলত্রুটির জন্য মহান আল্লাহর দরবারে ক্ষমা চাইত। হজরত আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, এ কয়েকটি বিধান আমার কাছ থেকে গ্রহণ করবে এবং তদনুযায়ী আমল করবে? বা এরূপ লোককে শিখিয়ে দেবে যে তদনুরূপ আমল করে? আমি বললাম, ইয়া রসুলাল্লাহ, আমি গ্রহণ করব। অতঃপর তিনি আমার হাত ধরে পাঁচটি সংখ্যা গণনা করালেন। তিনি বললেন, ১. আল্লাহতায়ালা যা কিছু নিষিদ্ধ করেছেন তা থেকে বিরত থাক। এতে তুমি উত্তম ইবাদতকারী হবে। ২. আল্লাহতায়ালা তোমার নসিবে যা কিছু বণ্টন করে দিয়াছেন, তাতেই খুশি থাকবে। এতে তুমি সর্বাপেক্ষা বড় ধনী হবে। ৩. তোমার প্রতিবেশীর সঙ্গে সদাচরণ করবে, এতে তুমি পূর্ণ ইমানদার হবে। ৪. নিজের জন্য যা পছন্দ কর, মানুষের জন্যও তা পছন্দ করবে। এতে তুমি প্রকৃত মুসলমান হবে এবং ৫. বেশি হাসবে না। কেননা বেশি হাসলে অন্তর মরে যায় (মুসনাদে আহমদ, তিরমিযী)। হজরত ইবনে মাসউদ (রা.) নবী করিম (সা.) থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি ইরশাদ করেছেন, কিয়ামত দিবসে মানুষের দুই পা এতটুকু বাড়তে পারবে না, যে পর্যন্ত না তার কাছ থেকে পাঁচটি বিষয়ের জবাব চাওয়া হবে। যথা ১. তার বয়স সম্পর্কে যে সে তার বয়স কী কাজে ব্যয় করেছে? ২. তার যৌবন সম্পর্কে যে সে তার যৌবন কী কাজে লাগিয়েছে? ৩. তার ধনসম্পদ সম্পর্কে যে সে তার ধনসম্পদ কীভাবে কোথা থেকে অর্জন করেছে? ৪. তার ধনসম্পদ সম্পর্কে যে সে তার ধনসম্পদ কোথায় কীভাবে ব্যয় করেছে? ৫. এবং সে ইল্ম সম্পর্কে, যে ইল্ম সে হাসিল করছিল তদনুযায়ী কী আমল করেছে? (তিরমিযী)। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, স্বাস্থ্য (সুস্থতা) এবং অবকাশ এ দুটি মূল্যবান সম্পদের সদ্ব্যবহারের ব্যাপারে অধিকাংশ লোক বিভ্রান্তিতে রয়েছে (বুখারি)। অর্থাৎ এ দুটি এমন মূল্যবান সম্পদ, যা হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার পর তার মর্যাদা মানুষ বুঝতে পারে। হজরত আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন, রসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, রোজ কিয়ামতে নিয়ামত সম্পর্কে বান্দার কাছে সর্বপ্রথম যে প্রশ্ন করা হবে, তা হলো, আমি কি তোমাকে স্বাস্থ্য ও সুস্থতা দান করিনি? আমি কী তোমাকে শীতল পানি দিয়ে পরিতৃপ্ত করিনি? (তিরমিযী)।