দুনিয়ার প্রথম মানব হজরত আদম (আ.) ও প্রথম মানবী বিবি হাওয়ার জন্ম হয়েছিল পিতামাতা ছাড়াই। আল্লাহর কুদরতে পৈতৃক সম্পর্ক ছাড়াই কুমারী মায়ের গর্ভে জন্মলাভ করেন এ নবী। হজরত ঈসা (আ.)-এর ওপর নাজিল হয় আসমানি কিতাব ইনজিল। হজরত ঈসা (আ.) আগের সব নবী ও আসমানি কিতাবের সত্যায়নকারী এবং সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আগমনের সুসংবাদ দান করেন। হজরত ঈসা (আ.) ছিলেন অন্য সব নবী-রসুলের মতোই পবিত্র পুরুষ। আল কোরআনে তাঁর নাম ২৫ বার উল্লেখ হয়েছে। হজরত ঈসা (আ.)-এর জননী মরিয়মের নামে কোরআনে একটি স্বতন্ত্র সুরা রয়েছে। মরিয়ম শব্দটি কোরআনে ৩৫ বার উল্লেখ হয়েছে। হজরত ঈসা (আ.)-এর সৃষ্টি হজরত আদম (আ.)-এর সঙ্গে অনেকাংশে তুলনীয়। ইরশাদ হয়েছে, “আল্লাহর কাছে নিশ্চয় ঈসা (আ.)-এর দৃষ্টান্ত আদম (আ.)-এর দৃষ্টান্তসদৃশ। তিনি তাঁকে মৃত্তিকা থেকে সৃষ্টি করেন; এরপর তাঁকে বলেন ‘হও’, ফলে সে হয়ে গেল।” সুরা আলে ইমরান, আয়াত ৫৯। সুরা মরিয়মে হজরত ঈসা (আ.)-এর জন্ম সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ মরিয়মের কাছে জিবরাইল ফেরেশতাকে পাঠান। মানুষের রূপ ধারণ করে তিনি তাঁর সামনে আত্মপ্রকাশ করেন। জিবরাইল মরিয়মকে বলেন, তোমাকে এক পবিত্র পুত্র দান করার জন্য আল্লাহ আমাকে পাঠিয়েছেন। মরিয়ম ফেরেশতাকে বলেন, কেমন করে আমার পুত্র হবে, আমাকে তো কোনো পুরুষ স্পর্শ করেনি। আমি ব্যভিচারিণীও নই। জিবরাইল বলেন, আল্লাহর কাছে সবকিছুই সহজসাধ্য। কুমারী নারীর গর্ভে পুরুষের সংস্পর্শ ছাড়াই সন্তান জন্মদান মানুষের জন্য এক নিদর্শন। এটি আল্লাহপ্রদত্ত অনুগ্রহ এবং স্থিরীকৃত বিষয়। ঈসা ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর মরিয়ম তাঁর সম্প্র্রদায়ের কাছে উপস্থিত হলেন। তারা কুমারীর মাতৃত্বলাভকে সমালোচনার দৃষ্টিতে দেখল এবং বলল তোমার পিতামাতা অসৎ কিংবা ব্যভিচারী ছিল না, তুমি এ কোন অদ্ভুত কাণ্ড ঘটালে? চারদিকের তীব্র বাক্যবাণে বিপর্যস্ত মরিয়ম তাঁর সম্প্র্রদায়ের লোকদের বললেন, তোমরা এ শিশুর কাছে জিজ্ঞাসা কর কেন অদ্ভুত কাণ্ড ঘটল। লোকেরা বলল, যে কোলের শিশু তার সঙ্গে আমরা কেমন করে কথা বলব? সে (শিশু ঈসা আ.) বললেন, ‘আমি তো আল্লাহর বান্দা। তিনি আমাকে কিতাব দিয়াছেন, আমাকে নবী করেছেন। যেখানেই আমি থাকি না কেন তিনি আমাকে বরকতময় করেছেন, তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন যত দিন জীবিত থাকি তত দিন সালাত ও জাকাত আদায় করতে। আর আমাকে আমার মাতার প্রতি অনুগত করেছেন এবং তিনি আমাকে করেননি উদ্ধত ও হতভাগ্য; আমার প্রতি শান্তি যেদিন আমি জন্মলাভ করেছি, যেদিন আমার মৃত্যু হবে এবং যেদিন জীবিত অবস্থায় আমি উত্থিত হব। এই-ই হলো মরিয়মতনয় ঈসা (আ.)। সত্য কথা, যে বিষয়ে উহারা বিতর্ক করে।’ (সুরা : ১৯ মরিয়ম, আয়াত : ১৬-৪০)।


ঈসা ইবনে মারইয়াম (আ.) আবার পৃথিবীতে নাজিল হবেন। তবে নবী হয়ে নতুন কোনো শরিয়ত নিয়ে দুনিয়াতে আসবেন না; বরং তিনি শেষ নবী মুহাম্মদ (সা.)-এর একজন উম্মত হয়ে আগমন করবেন এবং ইসলামি শরিয়তের মাধ্যমে বিচার-ফয়সালা করবেন। মুসলমানগণ যখন দাজ্জালের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ করবে, ঠিক সে সময়ে আল্লাহর নবী ঈসা (আ.) আগমন করবেন। তখন ফজরের নামাজের একামত হয়ে যাবে। তিনি ইমামের পেছনে মুক্তাদি হয়ে নামাজ আদায় করবেন। দাজ্জাল ঈসা (আ.)-এর আগমন সম্পর্কে জানতে পেরে বায়তুল মাকদিসের দিকে চলে যাবে। ঈসা (আ.) সেখানে গিয়ে দেখবেন দাজ্জাল একদল মুসলমানকে অবরোধ করে রেখেছে। ঈসা (আ.) দরজা খুলতে বলবেন। দরজা খুলে দেওয়া হলে তিনি পেছনে দাজ্জালকে দেখতে পাবেন। তার পিছু ধাওয়া করে তাকে পাকড়াও করবেন এবং ফিলিস্তিনের লুদ্দ শহরের গেটে তাকে এবং তার বাহিনীকে হত্যা করবেন।


ঈসা (আ.) পৃথিবীতে কত দিন থাকবেন এ ব্যাপারে দুই ধরনের মত পাওয়া যায়। কোনো কোনো বর্ণনায় আছে তিনি সাত বছর অবস্থান করবেন। আবার কোনো বর্ণনায় আছে ৪০০ বছরের কথা। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘অতঃপর তিনি ৪০ বছর পৃথিবীতে অবস্থান করে মৃত্যুবরণ করবেন। মুসলমানরা তাঁর জানাজা পড়ে দাফন করবে। মুসলিম শরিফে আছে, ‘অতঃপর মানুষ পৃথিবীতে সাত বছর শান্তিতে বসাবাস করবে। পরস্পরের মধ্যে কোনো ধরনের হিংসাবিদ্বেষ থাকবে না।’ উভয় বর্ণনার মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে গিয়ে আলেমগণ বলেন, যে বর্ণনায় সাত বছরের কথা বলা হয়েছে সেখানে অবতরণ করার পর সাত বছরের কথা বলা হয়েছে। আর যেখানে ৪০ বছরের কথা বলা হয়েছে, সেখানে আকাশে উঠিয়ে নেওয়ার সময় তাঁর বয়সকে পুনরায় হিসাব করে দেখানো হয়েছে।