রাজশাহীতে একটা সময় সুপেয় পানি সরবরাহের জন্য বসানো হয়েছিল ঢোপকল। এরপর খোদ সিটি করপোরেশন পানি সরবরাহের দায়িত্ব নেয়। তখন নগরীতে পাইপলাইনের মাধ্যমে ২১ হাজার হোল্ডিংয়ে পানির সংযোগ দেওয়া হয়। এতে শহরের ৫৬ শতাংশ মানুষের চাহিদা পূরণ হতো। ২০১০ সালের ১ আগস্ট প্রতিষ্ঠিত হয় রাজশাহী ওয়াসা। কিন্তু তাতেও নগরীর বাসিন্দাদের সুপেয় পানির সংকট কাটেনি। অন্যকথায় নগরবাসীর সুপেয় পানির চাহিদা পূরণে এখনো পুরোপুরি সক্ষম নয় প্রতিষ্ঠানটি। এদিকে  রাজশাহীতে ওয়াসার পানিতে এরই মধ্যে পেটের পীড়ার অন্যতম উপাদান কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। ওয়াসার নিজ উদ্যোগে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের পরীক্ষায় পানিতে এই ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি মিলেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওয়াসার পানিতে এই ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি শূন্য থাকার কথা। অথচ সেখানে ‘কলোনি ফর্মিং ইউনিট’ ১ হাজার পর্যন্ত পাওয়া গেছে, যা অত্যন্ত ক্ষতিকর।


রাজশাহী ওয়াসার পানি সাধারণত নিম্নবিত্তের মানুষ সরাসরি পাইপলাইন থেকে নিয়ে পান করেন। এখনো শহরের বিভিন্ন মোড়ে যে কয়েকটি ঢোপকল আছে, তার সঙ্গে ওয়াসার পানির লাইন সংযুক্ত করা হয়েছে। সেখান থেকে পানি নিয়ে মহল্লাবাসী পান করেন। রাজশাহী নগরীর খাবারের যে হোটেলগুলো আছে, তাতেও ফিল্টার করা পানির ব্যবস্থা রাখা হয়। আলাদা টাকা দিয়ে ক্রেতারা এই পানি পান করেন। নিম্নবিত্ত ও খেটেখাওয়া মানুষ যারা আলাদা করে টাকা দিয়ে খাবার পানি কিনতে চান না, তারাই হোটেলে ওয়াসার পানি পান করেন। নগরীর কুমারপাড়া এলাকার গোলাপ মামার হোটেলের মালিক গোলাপ রহমান জানান, তার হোটেলের বেশির ভাগ ক্রেতা নিম্নবিত্ত শ্রেণির। তাদের ৯০ ভাগই ওয়াসার পানি পান করেন।


মহানগরীতে প্রতিদিন পানির চাহিদা সাড়ে ১৩ কোটি লিটার। কাগজে কলমে প্রতিদিন ওয়াসার গড় উৎপাদন ১০ কোটি ৭০ লাখ লিটার। রাজশাহী ওয়াসা বলছে, রাজশাহীর গোদাগাড়ী পয়েন্টে চীন-বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে ৪ হাজার ৬২ কোটি ২২ লাখ টাকার পানি শোধনাগার প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। প্রকল্পটির কাজ শেষে হলে এ সংকট থাকবে না।


এদিকে নগরবাসীর সুপেয় পানির চাহিদা পূরণ করতে ব্যর্থ হলেও আবার পানির দাম বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে রাজশাহী ওয়াসা। এ ব্যাপারে রাজশাহী ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকীর হোসেন বলেন, দাম বাড়ানোর পরও রাজশাহী ওয়াসাই সবচেয়ে কমদামে পানি দেয়। তা ছাড়া সার্বিক ব্যয় বহন করার জন্য তাদের কাছে দাম বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। উল্লেখ্য, এর আগে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে এক লাফে ওয়াসার পানির দাম তিন গুণ বাড়ানো হয়। এ নিয়ে তখন ওয়াসার গ্রাহকদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ ছিল।


অন্যদিকে ওয়াসার লাইনের কয়েকটি জায়গায় সীমিত আকারে মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। পানি কলিফর্মমুক্ত করতে এরই মধ্যে ১৫টি পাম্পে ‘ক্লোরিনেশন’ পদ্ধতির ব্যবহার শুরু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এ সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন ওয়াসার এমডি। আর পানির ময়লা দূর করার জন্য পাইপগুলো ‘ওয়াশআউট’ করা হয়েছে। তবে ওয়াসার পানি পান করে নগরবাসীর রোগাক্রান্ত হওয়ার অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন তিনি।


জাকীর হোসেন বলেন, ‘আমরা পরিশোধন করে সুপেয় পানিই সরবরাহ করে থাকি। এই পানি খেয়ে কারও অসুখ-বিসুখ হয়েছে, এমন অভিযোগ পাইনি। পানিতে যাতে ময়লা না যায় এ জন্য পাইপগুলো নিয়মিত ‘ওয়াশ আউট’ করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে সব পাম্পেই ক্লোরিনেশন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে, যাতে কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়া নির্মূল হয়।