গুমের সঙ্গে জড়িত রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সদস্যদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনাসহ তিন দফা দাবি জানিয়েছে গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের সংগঠন মায়ের ডাক। গতকাল রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে মায়ের ডাক আয়োজিত মানববন্ধনে লিখিত দাবিগুলো পড়ে শোনান সংগঠনের সমন্বয়কারী সানজিদা ইসলাম। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে এই দাবিগুলো তুলে ধরে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সদুত্তর চেয়েছেন। অন্য দাবি দুটি হলো গুমের শিকার ব্যক্তিদের আয়নাঘরের মতো বন্দিশালা থেকে নিঃশর্ত মুক্তি দিয়ে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে এবং জাতিসংঘ ও নাগরিকদের তত্ত্বাবধানে গুমের শিকার ব্যক্তি ও পরিবারের সদস্যদের জন্য দ্রুত একটি কমিশন গঠন করতে হবে, যা ঘটনার তদন্ত থেকে শুরু করে বিচার পর্যন্ত করণীয় সবই করবে, পাশাপাশি আয়নাঘরগুলো ভেঙে জাদুঘর বানাতে হবে, যাতে আর কেউ গুম, খুন এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ করতে না পারে। সানজিদা ইসলাম বলেন, ‘স্বজনদের গুম করে আটকে রাখা হয়েছে। তারা জীবিত আছে কি না, ফেরত আসবে কি না, তা জানি না। আমরা চাই আমার মাসহ অন্য মায়েরা যেন সন্তান ফিরে পান।’ মায়ের ডাকের আরেক সমন্বয়ক আফরোজা ইসলাম জানালেন, তারা এক যুগ পরে স্বাধীনভাবে শহীদ মিনারে এসে কথা বলতে পারছেন। মানববন্ধনে যোগ দেওয়া স্বজনদের হাতে ছিল গুমের শিকার ব্যক্তিদের ছবি, কারও হাতে বিভিন্ন দাবিসংবলিত পোস্টার।


বক্তা হিসেবে উপস্থিত হয়ে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ১৫ বছরের মধ্যে এই প্রথম মায়ের ডাকের আয়োজনে শহীদ মিনারে আসতে পেরেছেন বলে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নেওয়া ছাত্র-জনতাকে অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, আন্দোলনের প্রাথমিক বিজয় হয়েছে। নতুন বাংলাদেশ গড়া সহজ বিষয় না। নতুন সরকারকে সময় দিতে হবে।


আরেক শিশু সাফাও ১০ বছর ধরে জানে না তার বাবা কোথায়। অন্য শিশুদের মতো সেও বাবার হাত ধরে স্কুলে যেতে চায়। রাইদার বাবা গুম হয়েছেন ১১ বছর আগে। যারা তার বাবাকে ধরে নিয়ে গিয়েছিলেন, তাদের কেন গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না, সে প্রশ্ন করে রাইদা। আনিশা কাঁদতে কাঁদতে বলল, বাবা বেঁচে আছে না মরে গেছে, ছোট ভাইয়ের এ প্রশ্নের উত্তর তার জানা নেই। রেহানা মুন্নীর বাসা থেকেই ২০১৩ সালে ছোট ভাই সেলিম রেজাকে অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘আমাদের শান্তি নেই। ঈদ নেই। আমার ভাইয়ের অপরাধ ছিল সে বিএনপি করে। বাবা মারা গেছে। মা মৃত্যুপথযাত্রী। শেখ হাসিনা কেন আমার ভাইকে গুম করল।’ ইমন ওমর (৩০) গত তিন দিন ধরে বাবার খোঁজে ঢাকায়। দীর্ঘ সাত বছর আগে চট্টগ্রাম থেকে তার বাবা ওমর ফারুককে র‌্যাব পরিচয়ে তুলে নেওয়া হয়। সেই থেকে র‌্যাব, সংশ্লিষ্ট থানাসহ নানা জায়গায় খুঁজেছেন। কিন্তু বাবার সন্ধান মেলেনি। তবে শিক্ষার্থী-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার পতনের পর ডিজিএফআইয়ের ‘আয়নাঘর’ থেকে সাবেক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহিল আমান আযমী ও আহমাদ বিন কাসেমের ফিরে আসার খবরে তিনি লক্ষ্মীপুর থেকে ঢাকায় ছুটে এসেছেন। গত ৯ আগস্ট বাবার খোঁজে যান ডিজিএফআই কার্যালয়ের সামনে। সেখানে গিয়ে হতাশ হয়ে দাঁড়ান জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে। রবিবার মানবাধিকার সংস্থা ‘মায়ের ডাক’ আয়োজিত মানববন্ধনে বাবার খোঁজে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে দাঁড়ান তিনি। আফরোজা ইসলাম আঁখির সভাপতিত্বে এবং মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসার পরিচালনায় আরও বক্তব্য রাখেন অধিকারের পরিচালক নাসির উদ্দিন এলান, নৃবিজ্ঞানী রেহনুমা আহমেদ, সালেহ উদ্দিন সিফাত, গুম হওয়া মোয়াজ্জেম হোসেন তপুর বোন শেলি, কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী আক্তার হোসেনসহ বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা।