তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতের সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকার ৩৩ প্রকল্প তদন্তের আওতায় আনা হচ্ছে। বিগত সরকারের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের নেতৃত্বে এসব প্রকল্পে ব্যাপক দুর্নীতি ও বিদেশে টাকা পাচার হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে কয়েকটি প্রকল্পে দফায় দফায় বাজেটের পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। প্রকল্পে কেনাকাটার নামে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এমনকি খরচ না করেও বিল তোলার একাধিক তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে।  


সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০১০ সাল থেকে তথ্য ও প্রযুক্তি খাতের প্রকল্প নেওয়া শুরু হয়। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল, বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক, আইসিটি বিভাগ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর, ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সি ও কন্ট্রোলার অব সার্টিফাইং অথরিটি। প্রকল্পগুলোর মধ্যে ২ হাজার ১৪১ কোটি টাকার জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অবকাঠামো উন্নয়ন (ইনফো সরকার তৃতীয় পর্যায়) (তৃতীয় সংশোধিত) হচ্ছে সবচেয়ে বেশি বাজেটের। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকার ফোর টায়ার জাতীয় ডেটা সেন্টার স্থাপন (দ্বিতীয় সংশোধিত) এবং তৃতীয় সর্বোচ্চ হলো ১ হাজার ২৯৬ কোটি টাকার ডেভেলপমেন্ট অব ন্যাশনাল আইসিটি ইনফ্রা-নেটওয়ার্ক ফর বাংলাদেশ গভর্নমেন্ট ফেইজ-২ (ইনফো সরকার-দ্বিতীয় প্রকল্প)। এসব প্রকল্প প্রসঙ্গে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিগত সরকারের ৩৩টি সমাপ্ত প্রকল্প নিয়ে নানা অভিযোগ উঠেছে। আর্থিক দুর্নীতির পাশাপাশি প্রকল্পের কাজ নিয়ে নয়ছয় করা হয়েছে। এ কারণে সবগুলো প্রকল্পর কাজ তদন্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতে খুঁজে বের করা হবে দুর্নীতি আর নেপথ্যের খলনায়কদের।   


সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পগুলো হচ্ছে- ১০ কোটি টাকার এম্পাওয়ারিং রুরাল কমিউনিটিজ রিচিং দ্য আনরিচড ইউনিয়ন ইনফরমেশন অ্যান্ড সার্ভিস সেন্টার, ২১ কোটি ৪৩ লাখ টাকার বেসিক আইসিটি স্কিল ট্রান্সফার আপ টু উপজেলা লেভেল, ৩০৭ কোটি ৭০ লাখ টাকার ডেভেলপমেন্ট অব ন্যাশনাল আইসিটি ইনফ্রা-নেটওয়ার্ক ফর বাংলাদেশ গভর্নমেন্ট (বাংলাগভনেট) প্রকল্প, ৬৮ কোটি টাকার অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে বিসিসি শক্তিশালীকরণ, ১ হাজার ২৯৬ কোটি টাকার ডেভেলপমেন্ট অব ন্যাশনাল আইসিটি ইনফ্রা-নেটওয়ার্ক ফর বাংলাদেশ গভর্নমেন্ট  ফেইজ-২ (ইনফো সরকার-দ্বিতীয় প্রকল্প), ৩২ কোটি টাকার ক্যাপাসিটি বিল্ডিং অন আইটিই ম্যানেজমেন্ট প্রকল্প (আইটিইই), ৭৯৯ কোটি টাকার লেভারেজিং আইসিটি ফর গ্রোথ, এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড গভর্নেন্স (দ্বিতীয় সংশোধিত), ২৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকার ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য ই-গভর্নমেন্ট মাস্টার প্লান প্রণয়ন (প্রথম সংশোধিত), ২০ কোটি ৫৮ লাখ টাকার ডিজিটাল আইল্যান্ড মহেশখালী (প্রথম সংশোধিত), ৩৮ কোটি ৭০ লাখ টাকার সফটওয়্যার কোয়ালিটি পরীক্ষা সার্টিফিকেশন সেন্টার প্রতিষ্ঠাকরণ (প্রথম সংশোধিত), ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকার ফোর টায়ার জাতীয় ডেটা সেন্টার স্থাপন (দ্বিতীয় সংশোধিত), ২৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকার তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিস-অর্ডারসহ সব ধরনের প্রতিবন্ধী ব্যক্তির ক্ষমতায়ন, ৪৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকার জাপানিজ আইটি সেক্টরের উপযোগী করে আইটি ইঞ্জিনিয়ারদের দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্প, ৩৪ কোটি ৫ লাখ টাকার বাংলাদেশ ই-গভর্নমেন্ট ইআরপি (দ্বিতীয় সংশোধিত), ৩৫ কোটি ৪৩ লাখ টাকার লিভারেজিং আইসিটি ফর এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড গ্রোথ অব দ্য আইটি-আইটইএস ইন্ডাস্ট্রি, ২ হাজার ১৪১ কোটি টাকার জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অবকাঠামো উন্নয়ন (ইনফো সরকার তৃতীয় পর্যায়) (তৃতীয় সংশোধিত), ১৭৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকার বাংলাদেশ সরকারের জন্য নিরাপদ ই-মেইল ও ডিজিটাল লিটারেসি সেন্টার স্থাপন (দ্বিতীয় সংশোধিত প্রকল্প), ১৯ কোটি টাকার সাপোর্ট টু হাইটেক পার্ক অথরিটি টু এস্টাবলিশ হাইটেক পার্ক আ্যাট কালিয়াকৈর গাজীপুর, ২৫৩ কোটি টাকার শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক, যশোর (দ্বিতীয় সংশোধিত), ৩৯৫ কোটি টাকার কালিয়াকৈর হাইটেক পার্ক (এবং অন্যান্য হাইটেক পার্ক)-এর উন্নয়ন প্রকল্প (তৃতীয় সংশোধিত), ১১৭ কোটি টাকার চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শেখ কামাল আইটি বিজনেস ইনকিউবেটর স্থাপন (দ্বিতীয় সংশোধিত), ৫ কোটি টাকার দেশের ৩২টি জেলায় শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং অ্যান্ড ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপনের নিমিত্ত সম্ভাব্যতা যাচাই (প্রথম সংশোধিত), ৩৩৭ কোটি টাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্ক, সিলেট (দ্বিতীয় সংশোধিত) প্রকল্প, ৩৩৬ কোটি টাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাইটেক পার্ক, রাজশাহী (বরেন্দ্র সিলিকন সিটি) স্থাপন (দ্বিতীয় সংশোধিত), ২১ কোটি ৪৩ লাখ টাকার এস্টাবলিশমেন্ট অব সাসেক ইনফরমেশন হাইওয়ে (বাংলাদেশ পার্ট), ৩৯৩ কোটি টাকার একসেস টু ইনফরমেশন-২ (দ্বিতীয় সংশোধিত), ৩২০ কোটি টাকার লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট (দ্বিতীয় সংশোধিত) প্রকল্প, ৭০ কোটি ৬০ লাখ টাকার জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের আইসিটি অবকাঠামো, মানবসম্পদ ও প্রযুক্তি উন্নয়ন প্রকল্প (তৃতীয় সংশোধিত), ৩৯৮ কোটি টাকার সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ও ভাষা প্রশিক্ষণ ল্যাব স্থাপন (তৃতীয় সংশোধিত), ৮১ কোটি ৮৯ লাখ টাকার প্রযুক্তির সহায়তায় নারীর ক্ষমতায়, ৩ কোটি ২০ লাখ টাকার ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সি স্থাপন ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো সৃষ্টির জন্য জরিপ প্রকল্প, ২২ কোটি ৪ লাখ টাকার পিকেআই (পাবলিক কি ইনফ্রাস্ট্রাকচার) সিস্টেমের মানোয়ন্নয়ন এবং সিসিএ কার্যালয়ের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও ৫৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকার সিসিএ কার্যালয়ে সিএ মনিটরিং সিস্টেম স্থাপন এবং নিরাপত্তা বিধান (প্রথম সংশোধিত) শীর্ষক প্রকল্প।