ফের মিয়ানমার থেকে সীমান্ত পেরিয়ে এক দিনেই ৫০০ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। সীমান্তে আরও অন্তত ৪০ হাজার রোহিঙ্গা এভাবে বাংলাদেশে ঢোকার অপেক্ষায় রয়েছে। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডুতে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে দেশটির সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির চলমান সংঘাত আরও তীব্র হওয়ায় এ প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার রাত ১১টার দিকে সীমান্তের ওপারে গোলার বিকট শব্দ শোনা যেতে থাকে। গতকাল ভোর পর্যন্ত এই গোলাগুলি চলেছে। টেকনাফে ক্যাম্পের কয়েকজন রোহিঙ্গা জানিয়েছেন, দুই পক্ষের গোলাগুলিতে অনেক রোহিঙ্গা মারা যাচ্ছে। এখন পাশের দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ছাড়া তাদের যাওয়ার মতো কোনো জায়গা নেই। তাই যে কোনো সময় তারা বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে ছুটতে পারে। কিন্তু যারা এপারে আসার জন্য আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে, তাদের এখানে না আসতে উৎসাহিত করা হচ্ছে। টেকনাফ পৌরসভার জালিয়াপাড়ার মোজাম্মেল হক বলেন, ওপারে গোলার শব্দে রাতভর নির্ঘুম কেটেছে। শনিবার সারা রাত গোলাগুলি চলেছে। তাই আমরা রাত জেগে বসে ছিলাম। বিশেষ করে নারী ও শিশুরা ভয়ে ছিল। সীমান্তের বাসিন্দা ইমান শরীফ বলেন, ‘রাতভর মংডুতে তুমুল যুদ্ধে আমরা সীমান্তের মানুষ ঘুমাতে পারিনি। অনেকে ঘরের বাইরে রাত কাটিয়েছেন। একটু পরপরই বিকট শব্দে সীমান্ত কেঁপে কেঁপে উঠছিল। এ পরিস্থিতিতে যে কোনো মুহূর্তে সীমান্তে ব্যাপক অনুপ্রবেশ ঘটতে পারে। তবে জানা গেছে, কক্সবাজারের টেকনাফের বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে ফের রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ শুরু হয়ে গেছে। শনিবার এক দিনেই বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে ঢুকে পড়েছে প্রায় ৫০০ রোহিঙ্গা। টেকনাফ সীমান্ত এলাকার বাসিন্দারা জানান, চলমান সংঘাতের মধ্যে সীমান্তে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে, নাফ নদ পার হয়ে ফের বাংলাদেশে ঢুকে পড়ছেন রোহিঙ্গারা। পরে তারা চলে যাচ্ছেন উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন রোহিঙ্গা শিবিরে। এ ছাড়া মিয়ানমারের মংডু মগনিপাড়া, সিকদারপাড়া ও আইরপাড়া এলাকায় অন্তত ৪০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, এরই মধ্যে এক মাসে ১০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে। টেকনাফে আশ্রয় শিবিরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ১৬ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সহকারী পুলিশ সুপার মাইন উদ্দিন বলেন, কিছুসংখ্যক রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে ঢুকে পড়েছে। তাদের নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। নতুন করে কোনো রোহিঙ্গা যেন ঢুকতে না পারে, সে ব্যাপারে আশ্রয়শিবিরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আদনান চৌধুরী বলেন, সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ঘটনা ঘটছে। অনুপ্রবেশের সময় বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গাকে নাফ নদী থেকে পুনরায় মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হচ্ছে। অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নাফ নদী ও সীমান্তে টহল জোরদার করা হয়েছে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্য : গতকাল ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের বিষয়ে সরকারের অবস্থান জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘আমরা খুব স্পষ্ট করেই বলেছি আমরা আর একজন রোহিঙ্গাকেও আশ্রয় দিতে রাজি না। কিন্তু কিছু ঢুকে যাচ্ছে, এটা আমরা জানি। সেটাকে কতটুকু ঠেকানো যায় ঠেকানোর চেষ্টা করছি। বিজিবি প্রতিদিনই ফেরত পাঠাচ্ছে। কিন্তু তার পরেও একটা বড় এলাকা নিয়ে তারা ঢুকছে। সব এলাকাকে নিয়ন্ত্রণ করার বিষয়ে আমাদের সামর্থ্যরেও সীমাবদ্ধতা আছে। তবে আমরা যেখানে পারছি ফেরত দেওয়ার চেষ্টা করছি। উপদেষ্টা বলেন, ইউএনএইচসিআর চাইছে আমরা যেন তাদের আশ্রয় দিই। কিন্তু আমরা তাদের কাছে স্পষ্ট করেছি, আমরা ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছি। আমাদের যেটুকু ভূমিকা নেওয়া প্রয়োজন তার চেয়ে বেশি পালন করেছি। যারা আমাদের উপদেশ দিতে চায় তারা বরং তাদেরকে নিয়ে যাক।