রাজধানীর ব্যস্ততম সড়কের মধ্যে অন্যতম শাঁখারীবাজার মোড়। পাশের আদালত চত্বরে প্রতিদিন ভিড় জমায় হাজারো মানুষ। মোড়ের সিগন্যালে গাড়ির জটের মধ্যে হাত উঁচিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে মানুষ। অথচ মাথার ওপরেই ফাঁকা সুনসান ফুটওভার ব্রিজ। দু-একজন সচেতন মানুষ রাস্তা পারাপারে ফুটওভার ব্রিজে উঠলেও নামার সময় নাকে কাপড় চাপতে দেখা যায়।
বিষয়টি জানতে ফুটওভার ব্রিজে উঠে দেখা যায়- মলমূত্র ছড়ানো ফুটওভার ব্রিজজুড়ে। হাঁটার মতো পরিবেশ নেই। দুর্গন্ধে এক মুহূর্ত থামাও দায়। শুধু এ ফুটওভার ব্রিজ নয়, রাজধানীর অধিকাংশ ফুটওভার ব্রিজ ভিক্ষুক, ভাসমান হকারদের দখলে। আর রাত হলে ছিনতাইকারী, মাদকসেবীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়।
সম্প্রতি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ফুটওভার ব্রিজ ঘুরে দেখা যায়, ফুটওভার ব্রিজের বিভিন্ন কোনায় জমে আছে ময়লা। যে কয়েকটি চলন্ত সিঁড়িযুক্ত ফুটওভার ব্রিজ আছে, সেগুলোর অধিকাংশেই চলন্ত সিঁড়ি অচল। সিঁড়িজুড়ে ময়লা কাগজ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। চলন্ত সিঁড়ির গায়ে জুড়ে দেওয়া হয়েছে বাণিজ্যিক ও রাজনৈতিক প্রচারণার পোস্টার। দীর্ঘ সময় পরিষ্কার না করায় ফুটওভার ব্রিজগুলোর এ দশা বলে মনে করেন পথচারীরা।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি নগর উন্নয়ন ও পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ফুটওভার ব্রিজ আকর্ষণীয় করতে নানা ডিজাইন করা হয়, গাছ লাগানো হয়, এক্সেলেটর সিঁড়ি দেওয়া হয়। কিন্তু কিছুদিন পর গাছগুলো মরে যায়, নোংরা হয়ে চলাচলের ভোগান্তি বাড়ে। আমাদের ফুটওভার ব্রিজে এমনিতেই নাগরিকরা উঠতে চান না। সেখানে ফুটওভার ব্রিজের বেহাল দশা দেখলে তারা আরও নিরুৎসাহী হবেন। এসব বিষয়ে কর্তৃপক্ষের নজরদারি বাড়ানো উচিত।’
রাজধানীর বিমানবন্দর মোড়ের ফুটওভার ব্রিজে চলন্ত সিঁড়ি থাকলেও তা অচল দীর্ঘদিন ধরে। এক পাশে বিমানবন্দর আরেক পাশে রেলস্টেশন। নিচের ব্যস্ত সড়ক পারাপারে হাজারও মানুষ ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করেন। কিন্তু ফুটওভার ব্রিজে ধাক্কাধাক্কি করে চলতে হয় হকারদের কারণে। জিন্সের প্যান্ট, টিশার্ট, হেডফোন, চার্জার, আপেল, কমলা এমনকি হাঁড়িপাতিলও বিক্রি হয় ফুটওভার ব্রিজের ওপরে।
রেলস্টেশনে যাওয়ার জন্য ফুটওভার ব্রিজ দিয়ে পার হচ্ছিলেন সুমন চৌধুরী। তিনি বলেন, ট্রেনের সময় হয়ে গেছে, দ্রুত পার হওয়া জরুরি; কিন্তু ফুটওভার ব্রিজের এসব দোকানের ভিড় ঠেলে যাওয়াই মুশকিল। এ ভিড়ের মধ্যে ঘটে পকেটমারের ঘটনাও। দিনের পর দিন ফুটওভার ব্রিজে এসব চলছে কিন্তু দেখার কেউ নেই। নিউমার্কেটের সামনের ফুটওভার ব্রিজের অবস্থাও একই। দিনে হকারদের দখলে থাকা ফুটওভার ব্রিজগুলোতে রাত হলেই অভয়ারণ্য হয়ে ওঠে ছিনতাইকারী ও মাদকসেবীদের। ফুটওভার ব্রিজে উঠলেই ছিনতাইকারীদের কবলে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের। অনেক সময় ধারালো অস্ত্রের আঘাতে হতে হচ্ছে ক্ষতবিক্ষত।
গত ফেব্রুয়ারিতে উত্তরা হাউস বিল্ডিং এলাকার বিএনএস সেন্টারের সামনে ফুটওভার ব্রিজে ছিনতাইকারী সন্দেহে দুই যুবককে পিটিয়ে ফুটওভার ব্রিজে ঝুলিয়ে রেখেছিল স্থানীয় জনতা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, বেশ কয়েকজন এক ব্যক্তিকে ওপরে তুলছে। তার পায়ে দড়ি বাঁধা রয়েছে। তাকে ফুটওভার ব্রিজের লোহার পিলারের সঙ্গে উল্টো করে বাঁধছিলেন হলুদ রঙের টি-শার্ট পরা এক যবুক। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই দুই ব্যক্তিকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করে। সার্বিক বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ডিসি (মিডিয়া) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘রাজধানীকে সুরক্ষিত রাখতে সড়ক, ফুটওভার ব্রিজ সব জায়গায় নিয়মিত টহল চলমান রয়েছে। ফুটওভার ব্রিজে ছিনতাইকারী, মাদকসেবীদের বিষয়েও আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। রাজধানীবাসী যাতে নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারে এজন্য আমাদের অভিযান অব্যাহত।’