বিদেশে রাজনীতিবিদদের ২৪৪টি ফ্ল্যাট, ২০টি প্লট এবং ৭৯টি অ্যাপার্টমেন্টের সন্ধান পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত এক বছরের অনুসন্ধানে এসব সম্পদের সন্ধান পায় সংস্থাটি। সংশ্লিষ্টরা জানান, এই সময়ে দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত প্রায় ৩৬০ কোটি টাকার সম্পদ জব্দ করেছেন তারা। সূত্র জানায়, লন্ডন, দুবাই, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে ওই সব ফ্ল্যাট ও প্লটের খোঁজ পান দুদক কর্মকর্তারা। বিগত সরকারের মন্ত্রী, এমপি ও বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা এসব দেশে সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলেন।


দুদকের তথ্যানুযায়ী, ২০২৪ সালে সম্পদ জব্দ ও অবরুদ্ধের ৯১টি আদেশ হয়েছে। এর মধ্যে দেশে ২৮১ দশমিক ১৭ একর জমি রয়েছে। এসবের দলিলমূল্য ৬৩ কোটি ২৯ লাখ ২৭ হাজার ৯২ টাকা। জব্দ হওয়া ৮৪টি বাড়ি কিংবা ভবন রয়েছে, এর মূল্য ৬৫ কোটি ৮০ লাখ ৩৩ হাজার ৮৪৭ টাকা। ২২ কোটি ৩৫ লাখ ৩৮ হাজার ২৭০ টাকার ৮০টি ফ্ল্যাট জব্দ করা হয়েছে। ২ কোটি ২৭ লাখ ৬৭ হাজার ৮৩৭ টাকার ১৬টি প্লট এবং ১ কোটি ৪০ লাখ ৫৪ হাজার ৪৯১ টাকার ১টি অ্যাগ্রো ফার্ম জব্দ করা হয়েছে। এ ছাড়াও ৮১ লাখ ৪০ হাজার টাকার ৮টি গাড়ি, ৭৮ লাখ ৫০ হাজার টাকার ১টি রিসোর্ট, ৩ কোটি ৯৭ লাখ ২৪ হাজার ২৯২ টাকার ১১টি দোকান ও কমার্শিয়াল স্পেস, ৩৭ লাখ ২৯ হাজার টাকার ১টি অফিস স্পেস, ৬ কোটি ৮৬ লাখ ৭৫ হাজার টাকার ৬টি বাণিজ্যিক স্পেস এবং ২ কোটি ৫২ লাখ ৮১ হাজার ২০৪ টাকার একটি বাণিজ্যিক স্পেস জব্দ করা হয়। ৬৯টি নথিতে জব্দ হওয়া এসব সম্পদের দলিলমূল্য প্রায় ১৭০ কোটি ৫৫ লাখ ৩২ হাজার ৩৩ টাকা। এদিকে    ৩৮টি নথিতে ৫৫০টি ব্যাংক হিসাবে থাকা ১৪০ কোটি ৪১ লাখ ৮৫ হাজার ৭৪৫ টাকা অবরুদ্ধ করা হয়েছে। এ ছাড়া ১৯টি বিও হিসাবের ৪৪ কোটি ৬৫ লাখ ২৫ হাজার ৩৯৪ টাকা, ৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকার ৩০টি সঞ্চয়পত্র এবং ৪২টি কোম্পানির ৩ কোটি ৭৮ লাখ ৬৬ হাজার ৫১৭টি শেয়ার অবরুদ্ধ করা হয়েছে। তবে কোম্পানির শেয়ারগুলো ছাড়া মোট ১৯০ কোটি ৯০ লাখ ১১ হাজার ১৪০ টাকা অবরুদ্ধ করা হয়।


দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) মো. আকতারুল ইসলাম জানান, অনুসন্ধান পর্যায়ে দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদ অর্জনের প্রাথমিক তথ্যপ্রমাণ পাওয়ার পরই আদালতের মাধ্যমে সেসব সম্পদ জব্দ করা হয়। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে সরকারের একাধিক সংস্থা দুর্নীতিবাজদের বিষয়ে তদন্ত শুরু করে। এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বিভিন্ন ঘটনায় মামলা করা হচ্ছে।


জানা যায়, বিএফআইইউ থেকে গত জানুয়ারি পর্যন্ত ১৮ হাজারের বেশি ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে। এর মধ্যে জব্দ করা ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা ৩৭৮টি। এসব হিসাবে জব্দ করা অর্থ ও অন্যান্য সম্পদের পরিমাণ প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্পবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, ব্যবসায়ী এস আলম গ্রুপের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তিগত হিসাব, নাসা গ্রুপের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তিগত হিসাব, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের বিভিন্ন ব্যক্তিগত হিসাব, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামের ব্যক্তিগত হিসাব রয়েছে। বেক্সিমকো গ্রুপের সালমান এফ রহমানের ৬ হাজার ৮০০ কোটি টাকার শেয়ার জব্দ করেছে বিএসইসি। এস আলম গ্রুপের বিভিন্ন কোম্পানির ৮ হাজার কোটি টাকার বেশি শেয়ার জব্দ করা হয়েছে। পরবর্তী সময়ে মামলা হলে ওই গ্রুপের প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকার শেয়ার জব্দের আদেশ দেন আদালত। এ ছাড়া সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার শেয়ার জব্দ করা হয়েছে।