শীত মৌসুম শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সাগরে বাড়ছে জলদস্যুদের আনাগোনা। কক্সবাজারের মহেশখালী, কুত্বুদিয়া, পেকুয়া, চট্টগ্রামের বাঁশখালীসহ বেশ কয়েকটি পয়েন্টে সক্রিয় হয়ে উঠেছে জলদস্যু বাহিনী। অপহরণ করে জিম্মি করে আদায় করা হচ্ছে মুক্তিপণ। সঙ্গে বেড়েছে হত্যা, লুটপাট ও ছিনতাই। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে পেটের দায়ে আতঙ্ক নিয়েই সাগরে যাচ্ছেন জেলেরা। এদিকে জলদস্যুদের তৎপরতা বৃদ্ধির জন্য প্রশাসনের উদাসীনতা দায়ী বলে অভিযোগ করেছেন ফিশিং ট্রলার মালিক, জেলে ও ব্যবসায়ীরা। প্রশাসন মাঝেমধ্যে অভিযান চালালেও তা অপর্যাপ্ত বলে জানিয়েছেন বোট মালিকরা।


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, র‌্যাব-পুলিশের সহযোগিতায় ২০১৮ সালের ২০ অক্টোবর ছয়টি জলদস্যু বাহিনীর ৪৩ জন আত্মসমর্পণ করেন। আর ২০১৯ সালে ১৩টি দস্যুবাহিনীর ৯৯ জলদস্যু, ডাকাত, অস্ত্র কারিগর অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করেন। কিন্তু তাতেও শান্তি ফেরেনি সাগরে। বন্ধ হয়নি জেলেদের ওপর নির্যাতন। আত্মসমর্পণকারীর কেউ কেউ ফিরেছেন পুরনো পেশায়। বঙ্গোসাগরে মাছ আহরণে যাওয়া জেলেদের টার্গেট করে নির্যাতন-লুটপাট অব্যাহত রেখেছেন একাধিক জলদস্যু বাহিনীর সদস্যরা। সাগরে জেলেদের নির্যাতনের বিভিন্ন ঘটনায় ঘুরেফিরে আসে মহেশখালী উপজেলার সোনাদিয়া দ্বীপের মনজুর ডাকাত ও তার সহযোগী জুনু ডাকাত, কুতুবদিয়ার গুরা কালো ডাকাত ও পেকুয়ার রাজাখালীর নুরুল আবছার ওরফে বদু ডাকাতের নাম। এদের মধ্যে গুরা কালু ডাকাত অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করেন। কিন্তু এরপর আরও তিনবার র‌্যাব-পুলিশের হাতে ডাকাতির অভিযোগে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হন।


এদিকে জলদস্যুদের তৎপরতা প্রসঙ্গে ট্রলার মালিক মোহাম্মদ ইসমাইল বলেন, সাগরে মহেশখালী-কুতুবদিয়ার একাধিক জলদস্যু বাহিনী তৎপর রয়েছে। মহেশখালীর মনজুর বাহিনী তার ট্রলারে গুলি ও লুটপাটের সঙ্গে জড়িত বলে জেনেছেন তিনি। পুলিশ ও স্থানীয় একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানান, ‘সোনাদিয়ার মনজুর ডাকাত এবার ডাকাতির ধরন পাল্টেছেন। তার নতুন জলদস্যু বাহিনীতে এবার তার পাশাপাশি নেতৃত্ব দিচ্ছেন আত্মস্বীকৃত গুরা কালো ডাকাত। দলে ভিড়িয়েছেন অর্ধশতাধিক ডাকাত সদস্যকে। যাদের অধিকাংশই র‌্যাব-পুলিশের মধ্যস্থতায় অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। সোনাদিয়া চ্যানেলের ডাকাতির ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে রমিজ বাহিনীর প্রধান রমিজ উদ্দিন বলেন, ‘অনেকে আলোর পথে ফেরার কথা বলে আত্মসমর্পণ করলেও নতুন করে একই পেশায় ফিরছেন। সাগরে জেলেদের আবারও নির্যাতন করছেন, লুটতরাজ চালাচ্ছেন।’ আর কক্সবাজার জেলা বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘সোনাদিয়া, কুতুবদিয়াসহ বিভিন্ন পয়েন্টে দস্যুরা আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। সুযোগ বুঝে মৎস্যজীবী সেজে সাগরে লুটতরাজ চালায় দস্যুরা।’


অন্যদিকে যোগাযোগব্যবস্থার অপ্রতুলতার কারণে জলদস্যুদের তৎপরতা বন্ধে পর্যাপ্ত অভিযান পরিচালনা করা যাচ্ছে না বলে দাবি করেছেন কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক জি এম রব্বানী। তিনি বলেন, ‘জলদস্যুদের উৎপাত বেড়ে গেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা এ বিষয়ে অবগত আছেন। যোগাযোগব্যবস্থার কারণে অনেক সময় সঠিক সময়ে অভিযান পরিচালনা করা যায় না।’ কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, ‘সাগরে দস্যুতা বৃদ্ধির বিষয়টি নিয়ে পুলিশ কাজ করছে। কোস্টগার্ডসহ অন্যদের নিয়ে সংকট মোকাবিলার জন্য পুলিশ সর্বাত্মক চেষ্টা করে যাবে।’