নিত্যপণ্যের বাজারে এতদিন স্বস্তি থাকলেও পিঁয়াজ, তেল, সবজির বাজারে অস্বস্তি শুরু হয়েছে। গত তিন দিনেই পিঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ২০ টাকার বেশি বেড়েছে। পাড়া-মহল্লায় আরও বেশি দামেও বিক্রি হচ্ছে। সরকারি সংস্থা টিসিবির হিসেবে পাঁচ দিনে পিঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি বেড়েছে ৩০ টাকা। এ ছাড়া বেশির ভাগ সবজির দামও বাড়ছে। এদিকে বাজারে নির্ধারিত নতুন দরের তেল না এলেও দাম বাড়ার ঘোষণায় খুচরা ব্যবসায়ী অনেকে বোতলজাত পুরোনো সয়াবিন তেল নতুন দামে বিক্রি করছেন। গতকাল রাজধানীর খিলক্ষেত, জোয়ার সাহারা ও মহাখালী বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।


এবার মৌসুমে বেশ কম দর ছিল পিঁয়াজের। ফলন ভালো হওয়ায় দেশি পিঁয়াজের কেজি সর্বনিম্ন ৩০ টাকায় নেমেছিল। এরপর কিছুটা বেড়ে ঈদের পরও ৩৫-৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। তবে এখন দর উঠেছে ৬০-৬৫ টাকায়। পাড়া-মহল্লায় ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজারদরের তথ্য বলছে, গতকাল রাজধানীর খুচরা বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি পিঁয়াজ ৪০ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হয়। গত সপ্তাহে বিক্রি হয় ৩০ থেকে ৪৬ টাকায়। মহাখালী বাজারের খুচরা পিঁয়াজ বিক্রেতা মো. মাহমুদ বলেন, এখন পিঁয়াজের দাম বাড়ার কারণ নেই। কৃষকরা পিঁয়াজ উৎপাদন করে বাজারে ছেড়ে দিয়েছেন। এই সুযোগে মুনাফালোভী কিছু বড় ব্যবসায়ী মজুদ বাড়িয়ে সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াচ্ছেন। বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারে সরবরাহ কমেছে ঠিকই, তবে দাম বাড়ার হার অস্বাভাবিক। সিন্ডিকেটও সক্রিয় রয়েছে, যারা কৃত্রিম সংকট তৈরির মাধ্যমে মুনাফা লুটছে। বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারপ্রতি ১৪ টাকা বাড়িয়েছে সরকার। এতে এক লিটার সয়াবিন তেলের দাম হয়েছে ১৮৯ টাকা, যা এতদিন ছিল ১৭৫ টাকা। অন্যদিকে খোলা সয়াবিন ও সয়াবিনের বিকল্প খোলা পাম তেলের দামও বেড়েছে লিটারে ১২ টাকা। খোলা সয়াবিন ও পাম তেলের দাম প্রতি লিটার ১৬৯ টাকা, যা ছিল ১৫৭ টাকা। সরকার নির্ধারিত নতুন দরের তেল না এলেও দাম বাড়ার ঘোষণায় খুচরা ব্যবসায়ী অনেকে বোতলজাত পুরোনো সয়াবিন তেল নতুন দামে বিক্রি করছেন বলেও অভিযোগ আছে। রমজানে বেশির ভাগ সবজির দামে স্বস্তি থাকলেও এখন প্রায় সব ধরনের সবজির দাম চড়া। রমজানে ২০ টাকায় টমেটো পাওয়া গেলেও বর্তমানে টমেটো ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া অন্যান্য সবজির দামও ঈদের পর থেকে বাড়ছে। বাজারে প্রতি কেজি শিম বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকায়, মিষ্টি কুমড়া ৩০-৪০ টাকা, শসা ৬০-৮০ টাকা, করলা ৬০-৭০ টাকা, উস্তে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া প্রতি কেজি ঢ্যাঁড়স বিক্রি হচ্ছে ৬০- ৭০ টাকা, ধুন্দুল ১০০ টাকা, ঝিঙা ১০০ টাকা, বেগুন ৮০ টাকা, পটোল ৭০ টাকা, কচুর লতি ৮০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, চিচিঙা ৭০ টাকা, কাঁচামরিচ ৮০ টাকা, লেবু মানভেদে প্রতি হালি ২০ থেকে ৩০ টাকা, কাঁচাকলা প্রতি হালি ৪০ টাকা, আলু প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০-২৫ টাকায়। তবে এখন মাংসের বাজারে অনেকটা স্বস্তি রয়েছে। ঈদের আগে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ২১০ থেকে ২৩০ টাকা দরে। একইভাবে সোনালি জাতের মুরগির কেজি বিক্রি হয়েছে ৩০০ থেকে ৩৩০ টাকায়। গতকাল প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৭০ থেকে ১৯০ এবং সোনালি জাতের মুরগি ২৭০ থেকে ২৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। গরুর মাংস এবং ডিমের দাম এখনো স্থিতিশীল রয়েছে। প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকায়। প্রতি ডজন ফার্মের ডিম বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৩০ টাকা দামে।


ক্রেতারা বলছেন, রমজানে সবজির দাম কম থাকলেও ঈদের পর থেকেই সবজির বাজার চড়া। দাম কমাতে বাজার মনিটরিং অব্যাহত রাখতে হবে। না হলে ফের অস্থির হয়ে উঠবে নিত্যপণ্যের বাজার। এখনই লাগাম টেনে ধরতে না পারলে বাজারে অস্থিরতা বাড়বে।