দেশের তৃতীয় পায়রা সমুদ্র বন্দরের প্রথম টার্মিনালের কাজ শেষে পণ্য খালাসের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যেই বন্দরে দুটি জাহাজ নোঙর করেছে। পরে সেখান থেকে পণ্য খালাস করে সড়কপথে পরিবহন শুরু হয়েছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। টার্মিনালটি চালু হওয়ায় পায়রা বন্দরের কার্যক্রমের গতিশীলতা আরও বেড়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।


পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) আজিজুর রহমান জানান, বন্দরের প্রথম টার্মিনালের কাজ শেষে জাহাজ থেকে পণ্য খালাস শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যেই দুবাই থেকে পাথরবাহী দুটি জাহাজ প্রথম জেটিতে নোঙর করে। সেখানে পাথর খালাস করে সড়কপথে পরিবহন করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, রাবনাবাদ চ্যানেলের চারিপাড়ায় এ টার্মিনালে একই সঙ্গে ২০০ মিটারের দৈর্ঘ্যরে তিনটি মাদার ভেসেল ভেড়ানোর সক্ষমতা রয়েছে। এ ছাড়া ৬৫০ মিটার দীর্ঘ মূল টার্মিনাল, ৩ লাখ ২৫ হাজার বর্গমিটার ব্যাকআপ ইয়ার্ড ও ১০ হাজার বর্গমিটার সিএফএস সুবিধা থাকছে। এ বন্দরে আরও দুটি টার্মিনাল নির্মাণাধীন আছে বলেও জানান তিনি। প্রথম টার্মিনাল থেকে সড়কপথে আন্ধারমানিক নদীর ওপর সেতু দিয়ে পণ্য পরিবহন করা হচ্ছে। তবে ভারী যানবাহন চলাচলের জন্য ওই নদীতে ফেরি সার্ভিস চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। এ ছাড়াও নদীর ওপর ভারী যানবাহন চলাচলের জন্য সেতু নির্মাণাধীন রয়েছে বলেও জানান তিনি। ওই কর্মকর্তা আরও জানান, সড়কপথে পণ্য পরিবহনের জন্য টার্মিনালের সঙ্গে ছয় লেনের ৬ দশমিক ৩৫০ কিলোমিটার সড়কের কাজও দ্রুতগতিতে চলছে। আন্ধারমানিক নদীতে এক দশমিক ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ চার লেনের সেতুর নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। পায়রা বন্দরের প্রথম টার্মিনাল, ছয় লেন সড়ক ও চার লেন সেতু নির্মাণসহ এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৫১৬ কোটি টাকা। জানা গেছে, পায়রা বন্দরের ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের কাজ শেষে গত ২৬ মার্চ দেশের গভীরতম চ্যানেলটি বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করে বিদেশি ড্রেজিং কোম্পানি জান ডি নুল। এর পর থেকে বন্দরের মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জেটিতে ভিড়তে শুরু করে ১০ দশমিক ৫০ মিটার ড্রাফটের পণ্যবাহী জাহাজ। বন্দরের ইনার-আউটার বারে মার্কিং ও বয়া বাতি বসানো হয়েছে। ইনারে একবারে ১৫টি জাহাজ রাখা যাবে। সেখানে লোডিং-আনলোডিং কার্যক্রম চলবে। বন্দরের কার্যক্রম আরও গতিশীল করতে বন্দর কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি বেশ কয়েকজন স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন।


বন্দরের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ফ্রেইড ফরোয়ার্ডস অ্যাসোসিয়েশন ও বন্দরের সীমানার মধ্যে ঘাটগুলোর প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। পায়রা বন্দরের রাজস্ব শাখা সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ অত্যন্ত সফলভাবে ৪৯৩টি বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজসহ মোট ৩ হাজার ২৯৮টি দেশীয় লাইটারেজের অপারেশনাল কার্যক্রম শেষ করেছে। যা থেকে বন্দর কর্তৃপক্ষ ১ হাজার ৬৭৫ দশমিক ৪৩ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করেছে। পায়রা বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল আবদুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রথম টার্মিনাল ও ইয়ার্ডের কাজ শেষ হয়েছে। ইতোমধ্যে দুটি জাহাজ এসেছে। সড়কপথে বন্দরের পণ্য পরিবহন শুরু হয়েছে। চলমান রয়েছে সেতু ও ছয় লেন মহাসড়কের কাজ। আন্ধারমানিক নদীর ওপর সেতুর কাজ ৪০ শতাংশ এবং ছয় লেন রাস্তার কাজ ৬৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। গত বছর ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে। এখন চলছে মেইনটেন্যান্স ড্রেজিংয়ের কাজ। ব্যবসায়ীরা সব ধরনের সহযোগিতা পাবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন আবদুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী। এ বন্দর ব্যবহার করে ব্যবসায়ীরা ইতোমধ্যেই সিমেন্টের কাঁচামাল, পাথরসহ নানান পণ্য নিয়ে আসছেন। দিন দিন পায়রা বন্দরের কার্যক্রম বাড়ছে। বিদেশি বিনিয়োগের সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।


তিনি মনে করেন, আমাদের পরবর্তী দুটি টার্মিনালের মধ্যে একটি মাল্টিপারপাস টার্মিনাল আরেকটি কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ করা হচ্ছে। পায়রা বন্দরের রাস্তা ছয় লেন করলেই তো হবে না, ভাঙ্গা থেকে বরিশাল হয়ে কুয়াকাটা পর্যন্ত বর্তমান সরকারের যে প্ল্যান ফোর লেন সেটাও বাস্তবায়ন হতে হবে। সেটাও পায়রা বন্দরের কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত।


২০১৩ সালের ১৯ নভেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পায়রা সমুদ্র বন্দরের ফলক উন্মোচন করেন। এরপর ২০১৬ সালের ১৩ আগস্ট বন্দরের আনুষ্ঠানিক পণ্য খালাস কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। বর্তমানে বন্দরের প্রথম টার্মিনাল ও ইয়ার্ডের কাজ শেষ। ছয় লেন সেতু ও সংযোগ সড়কসহ অবকাঠামোগত উন্নয়নের কাজ চলমান আছে।